সত্যজিৎ দাস:
প্রতিবছর চৈত্র মাসে সিলেটের চা-বাগানগুলো পরিণত হয় এক আধ্যাত্মিক উৎসবস্থলে। ধর্মীয় অনুশীলন,উপবাস,ঢাক-ঢোল আর দণ্ডযাত্রায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো ভক্ত ১৩ দিনব্যাপী পালন করেন ‘দণ্ড ব্রত’—এক নিবেদিত প্রাণ উপবাস ও কালী পূজার আচার।
ভক্তরা প্রতিদিন সকাল থেকে উপবাসে থাকেন। রাতের নির্ধারিত সময়েই গ্রহণ করেন সেদ্ধ নিরামিষ ভোগ। এই ব্রতের মাধ্যমে তাঁরা প্রার্থনা করেন—পুরনো বছরের দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়ে যেন নতুন বছরটি সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। অনেকে একে ‘দণ্ডপূজা’ বলেও অভিহিত করেন।
প্রতিদিন সকালে শুরু হয় দণ্ডযাত্রা। চা-বাগানের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ঢাকঢোলের সুরে গানের তালে তালে সারিবদ্ধভাবে হাঁটেন ভক্তরা। হাতে থাকে পূজার অনুষঙ্গ—ডালা, দুধভরা পিতলের পাত্র, ফুল, ধূপ, মাটির প্রদীপ। শিশুরাও অংশ নেয় এই শোভাযাত্রায়,যা চা-পল্লির প্রতিটি কোণে এনে দেয় উৎসবের আমেজ।
মন্দির প্রাঙ্গণে চলে দণ্ডনৃত্য,ঢাকের তালে তালে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন দর্শনার্থীরা। অনেক নারী চা-পাতা তোলার ফাঁকে যোগ দেন দণ্ডযাত্রায়, অন্যরা পালন করেন ব্রতের রীতিনীতি। পুরো উৎসব যেন হয়ে ওঠে আধ্যাত্মিক চেতনার জাগরণ।
চৈত্রের শেষ দিনে এক বিশাল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শেষ হয় এই ১৩ দিনের ব্রত। এটি শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়,বরং এক ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ,যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলেছে বাংলার চা-বাগানে।
এই দণ্ড ব্রতই প্রমাণ করে—বিশ্বাস,ভক্তি আর ঐতিহ্য আজও জীবন্ত বাংলার মাটিতে।