(জয়পুরহাট) জেলা প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট গ্রাহকদের পৌনে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের ধনতলা গ্রামের তজির উদ্দীন মন্ডলের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩৫) এর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী, স্থানীয় গ্রাহক ও এজেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এজেন্ট ব্যাংক এশিয়ার লগো ব্যবহার করে গ্রাহক ও পরিচিতদের কাছ থেকে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারী থেকে অফিসে তালা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ক্ষেতলাল উপজেলার চৌমুহনী বাজারে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনে ব্যাংক এশিয়ার একটি এজেন্ট শাখা চালু করেন দেলোয়ার হোসেন। ৫ লাখ টাকা জামানত নিয়ে স্থানীয় ১ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন তিনি। বর্তমানে ওই শাখায় ডিপিএস (মেয়াদি আমানত) ও সঞ্চয়ী হিসাব মিলে এক হাজারেরও বেশি গ্রাহক নিয়মিত লেনদেন করেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই মেয়াদি আমানতের গ্রাহক রয়েছেন। প্রতি মাসে ওই গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ বিল, সামাজিক লেনদেন, প্রবাসীদের পাঠানো টাকা লেনদেন করেন এ শাখার মাধ্যমে। গ্রাহকদের অভিযোগ গত তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের পরও বিল বকেয়া থাকার নোটিশও পেয়েছেন অধিকাংশ গ্রাহক এবং মাসিক মুনাফা সহ ব্যাংকে জমাকৃত টাকা তুলতে পারেননি। এনিয়ে ওই এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে এজেন্ট দেলোয়ারকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গ্রাহক সুমনের একাউন্টে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আমানত ছিল তিনি ৪০ হাজার টাকা তুলতে গেলে তার ফিঙ্গার নিয়ে সমোদয় টাকা উত্তোলন করে তার মোবাইলে ভূয়া ম্যাসেজ দিয়ে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেই। এভাবে অধিকাংশ গ্রাহকের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ দেলোয়ার হোসেন টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গত সোমবার উপজেলার মিনিগাড়ী গ্রামের পুটু তালুকদার, একই গ্রামের আকলিমা, ময়না, আমিনুর ও শিমুল তালুকদার সহ আরো অনেক ভূক্তভোগী তাদের একাউন্ট খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বরে কোনো টাকা জমা নেই।
ব্যবসায়ী মতিন রহমান বলেন, ব্যাংক এশিয়া একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান৷ অল্প সময়ে তাদের লেনদেনে সাধারণ মানুষ আস্থা অর্জন করেছে। দু’একটি প্রতারকের কারণে সাধারণ মানুষ আজ পথে বসেছে। ব্যাংক মালিকদের এজেন্ট শাখা দেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া উচিৎ। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের টাকা ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ৷ সেই সাথে ওই এজেন্ট ব্যাংকের দেলোয়ার কে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাই৷
মালয়েশিয়া প্রবাসী সেতু তালুকদার বলেন, আমি একজন প্রবাসী৷ আমার উপর সমস্ত পরিবার নির্ভরশীল। ঘরে আমার ক্যান্সার আক্রান্ত মা৷ তার চিকিৎসার জন্য মামুদপুর চৌমুহনী বাজার ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ৯৩ হাজার টাকা পাঠিয়েছি৷ কিন্তু ওই ব্যাংকের এজেন্ট দেলোয়ার হোসেন আমার পরিবারকে সে টাকা পরিশোধ করে নাই৷ আমার বাবা বারবার তার বাড়িতে গেলেও কোনো কাজ হয়নি। আমার মা ক্যান্সার রোগী হওয়ায় তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ মেডিসিন দিতে হয়৷ আমি ব্যাংক এশিয়ার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি৷
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রতন চৌধুরীর স্ত্রী জানান, অধিক মুনাফার স্বপ্ন দেখালে দেলোয়ারের এজেন্ট শাখায় ছয় লক্ষ টাকা আমানত রাখি। গতকাল আমার হিসাব নম্বর চেক করে দেখি, সে আমার সব টাকা নিয়ে পালিয়েছে।
আকলিমা বেগম নামের এক গ্রাহক বলেন, আমি একজন গৃহিনী। আমি অনেক কষ্ট করে আমার স্বামী প্রবাস থেকে দুই লাখ টাকা পাঠিয়েছে ওই এজেন্টের মাধ্যমে। এরমধ্যে চল্লিশ হাজার টাকা তুলতে পেরেছি, বাকি টাকা ব্যাংকে রয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার ব্যাংকে গিয়ে দেখি তালা ঝুলছে৷ আমি ব্যাংক এশিয়ার আক্কেলপুর শাখায় গিয়ে অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখি আমার একাউন্ট ফাঁকা৷ আমি আমার জমানো টাকা ফেরৎ চাই৷
ব্যাংক এশিয়ার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার রওনকুল ইসলাম বলেন, দেলোয়ারের পালানোর বিষয়টি আমরা জেনেছি। থানায় তার নামে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। হেড অফিসের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। গ্রাহকের সাথে বসে ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে আত্মগোপনে থাকা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আরিফুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে থাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।