দেওয়ান মাসুকুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) :
রোমানিয়ান আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনস অ্যান্ড ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বিরল কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন শ্রীমঙ্গলের মির্জা রাসেল আলম। তার এই সাফল্যের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও সহপাঠীরা তাকে উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
মির্জা রাসেল আলম শ্রীমঙ্গল পৌরসভা এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সম্প্রতি তিনি স্নাতকোত্তর এই ডিগ্রি অর্জন করেন।
মির্জা রাসেল আলম জানান, চাকরি, ব্যবসা কিংবা ১২ বছর স্টাডি গ্যাপ তার প্রবল আগ্রহ ও অধ্যাবসায়ের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বাসিন্দা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিনের চার ছেলের মধ্যে কনিষ্ঠতম সন্তান মির্জা রাসেল আলম ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত ভদ্র, নম্র, বিনয়ী ও চিন্তাশীল হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০০৪ সালে শ্রীমঙ্গলের বিজিবি পরিচালিত রাইফেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক এবং ২০০৭ সালে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর, ২০১৮ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
উচ্চশিক্ষার প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ২০২২ সালে তিনি রোমানিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। রোমানিয়া, ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রাচুর্যপূর্ণ দেশ। কার্পেথিয়ান পর্বতমালা এবং কৃষ্ণ সাগরের উপকূলবর্তী এই দেশটি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের লীলাভূমি। ২০২২ সালে রোমানিয়ান আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনস অ্যান্ড ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি বিষয়ে ভর্তি হন এবং ২০২৫ সালে সাফল্যের সঙ্গে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি মির্জা রাসেল বুখারেস্টে ‘মির্জা ওভারসিজ সেনজেন এফআরএল’ নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশি দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদের ভিসা প্রসেসিং এবং বিভিন্ন ভিসা সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। রোমানিয়ার সেনজেনভুক্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায়, এখান থেকে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে কাজের সুযোগ তৈরি হয়, যা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের ভিসা প্রসেস এবং ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনেও তিনি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। রোমানিয়া বর্তমানে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার হিসেবে তৈরি হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায়, রোমানিয়ার অর্থনীতি ক্রমশ উন্নত হচ্ছে এবং বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। মির্জা রাসেলের ‘মির্জা ওভারসিজ সেনজেন এফআরএল’ এর মতো প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মির্জা রাসেল আলম জানান, রোমানিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা ইউরোপের অন্যতম মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত। আমার মতো আরও অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রোমানিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেতে পারে। তুলনামূলকভাবে জীবনযাত্রার খরচ কম হওয়ায়, রোমানিয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে।
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা রাসেল জানান, তিনি তার পড়াশোনা অব্যাহত রাখবেন এবং ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য অধ্যায়ন চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামানের শুভেচ্ছা –
রোমানিয়ান আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনস অ্যান্ড ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন ও বিরল কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় শ্রীমঙ্গলের মির্জা রাসেল আলমকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনস অ্যান্ড ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য তোমার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন।
এই অর্জন শুধু তোমার একাডেমিক দক্ষতারই প্রমাণ নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং কূটনৈতিক দক্ষতার জগতে তোমার সম্ভাবনাময় যাত্রার দ্বার উন্মোচন করলো। ভবিষ্যতের প্রতিটি পদক্ষেপ হোক আরও সাফল্যময় ও গৌরবময়।”