অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল আলম চৌধুরীর বড় ভাই আলামিন চৌধুরীর ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই হামলা কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, নাকি ব্যক্তিগত শত্রুতার ফল? অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ঘটনার বিবরণ গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যার আগে আক্কেলপুর পৌর শহরের পুরাতন থানার পেছনের সিঙ্গেল সড়কের টিএমএসএস কার্যালয় এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলামিন চৌধুরীর ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচের রগ ও মাংসপেশি কেটে দেয়। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান, সেখান থেকে তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলাকারীরা পরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছিল। তারা দ্রুত আঘাত হানে এবং পালিয়ে যায়। তবে কেউ তাদের চিহ্নিত করতে পারেনি।
আলামিন চৌধুরীর পরিচয় ও প্রেক্ষাপট আলামিন চৌধুরী আক্কেলপুর পৌর শহরের চৌধুরীপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন রাশিয়ায় প্রবাস জীবন কাটিয়ে কয়েক বছর আগে দেশে ফেরেন। তাঁর ভাই শহীদুল আলম চৌধুরী আক্কেলপুরের সাবেক পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদুল আলমের মেয়র থাকাকালীন সময়ে রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। কিছুদিন আগে পৌরসভা থেকে তাঁকে অপসারণ করা হয়, যা নিয়ে বিতর্ক ও বিরোধ চলছিল। তবে এই বিরোধের সঙ্গে আলামিন চৌধুরীর কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।
হামলার সম্ভাব্য কারণ এই হামলার পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উঠে এসেছে: রাজনৈতিক প্রতিহিংসা: শহীদুল আলম চৌধুরী স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। তাঁর বিরোধীদের কেউ এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে৷ সম্প্রতি দলীয় কোন্দল ও পৌরসভার ক্ষমতা বদলের ফলে নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।শহীদুল আলমের বিরোধীরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত শত্রুতা: আলামিন চৌধুরী দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। তাঁর ব্যক্তিগত শত্রু থাকতে পারে, যারা এই হামলার পরিকল্পনা করেছে। ব্যবসায়িক বা পারিবারিক কোনো বিরোধ থেকেও এই হামলা হতে পারে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা: আক্কেলপুর এলাকায় কয়েকটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে, যারা ভাড়াটে হামলা চালিয়ে থাকে। এই হামলা যদি পেশাদার কোনো গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত হয়, তাহলে পরিকল্পনাকারীরা অন্য কেউ হতে পারে।
পুলিশি তদন্তের অগ্রগতি৷ আক্কেলপুর থানার ওসি মাসুদ রানা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং তদন্ত চলছে। তবে এখনো কোনো গ্রেপ্তার হয়নি।
পুলিশের একজন তদন্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত উভয় দিক থেকেই বিষয়টি দেখছি। আলামিন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি, কিছু তথ্য পেয়েছি, কিন্তু এখনও নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, স্থানীয় এক দোকানদার জানান, “আমি দূর থেকে দেখেছি, কয়েকজন লোক দৌড়ে পালাচ্ছিল, তবে মুখ ঢাকা ছিল। কে বা কারা হামলা চালিয়েছে, তা চিনতে পারিনি।”
একজন বাসিন্দা বলেন, “এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আগে থেকেই ছিল। তবে আলামিন চৌধুরী কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না বলে জানি।”
স্থানীয়দের উদ্বেগ এই ঘটনায় আক্কেলপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক সহিংসতার একটি অংশ, যা এলাকায় আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “এই ধরনের হামলা আগে খুব একটা দেখা যায়নি। এখন যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষও ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।”
এই হামলার প্রকৃত কারণ এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ব্যক্তিগত শত্রুতা অথবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা—এই তিনটি কারণের মধ্যে একটি বা একাধিক থাকতে পারে।
পুলিশের উচিত দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়। আক্কেলপুরের সাধারণ জনগণও আশায় আছে যে, প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।