জয়পুরহাট জেল প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর দোলপূর্ণিমা মেলার বর্ধিত সময় ও যাত্রাপালার অনুমোদন বাতিলের পর শুধু যাত্রাপালার প্যান্ডেল খোলা হয়েছে। এখনও মেলায় কাঠের আসবাবপত্রসহ অনান্য দোকানপাট রয়ে গেছে। মেলা কর্তৃপক্ষ দোকান বরাদ্দ দিয়ে মোটা অঙ্কের আদায় করেছে। অন্যদিকে আবার মেলা কর্তৃপক্ষ মেলায় কাঠের ও স্টিলের আসবাবপত্র ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিটি আসবাবপত্রে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা হাসিল আদায় করছে। হাসিল আদায়কারী কাউকে রসিদ দিচ্ছেন আবার কাউকে রসিদ দিচ্ছেন না। আজ শনিবার দুপুরে মেলা গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মেলার কাঠের ও স্টীলের আসবাবপত্রের দোকানীরা বলছেন, কাঠের মেলা শুরু না হতেই মেলার অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। মেলা কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে আগেই জায়গা বরাদ্দ দিয়ে প্রতি স্কয়ার ফিট ৪২০ টাকা হারে টাকা নিয়েছেন। আবার মেলা কর্তৃপক্ষের লোকজন আসবাবপত্র ক্রেতাদের কাছ থেকে হাসিলও নিচ্ছেন। মেলা কর্তৃপক্ষ সবক্ষেত্রেই লাখ-লাখ টাকা আয় করছে। অথচ আমরা দোকানীরা লোকসানের শঙ্কায় আছি। মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোপীনাথপুর দোলপূর্ণিমা মেলাটি ৫০০ বছরের পুরাতন বলে জনশ্রুুতি রয়েছে। প্রতি বছর দোলপূর্ণিমার দিন থেকে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর মৌজায় মেলা বসে। ঐতিহ্যবাহী এ মেলার জন্য আগাম কোন প্রচারণা করতে হয় না। এবছরেও দোলপূর্নিমার উপলক্ষে মেলা বসে। ১৩ দিনের এ মেলায় প্রথম পাঁচ দিন ঘোড়া-মহিষ ও গরু কেনা-বেচা হয়। গোপীনাথপুর দেবোত্তর এস্টেটের সেবাইত শ্রী নরেন্দ্র কৃষ্ণ প্রিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ঈদুল ফিতরের পরদিন থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মেলার সময় বর্ধিত করে। একইভাবে বারইল প্রশিক্ষিত যুব সমবায় সমিতি লিমিটেডের আবেদনের প্রেক্ষিত চৈতালী যাত্রাপালার অনুমোদনও দেওয়া হয়। জননিরাপত্তা ও শর্তভঙ্গের কারণে জেলা প্রশাসন বর্ধিত সময়ে মেলা চলার দুই দিনের মাথায় মেলা ও যাত্রার অনুমোদন বাতিল করে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট মোছাঃ মনিরা সুলতানা গত বৃহস্পতিবার মেলায় গিয়ে যাত্রাপালার প্যান্ডেল ও দোকানপাট সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন। ওইদিনই রাতের বেলায় যাত্রার প্যান্ডেল খুলে ফেলা হয়। তবে আজ শনিবার পর্যন্ত দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন মেলায় ২৫০ টির অধিক আসবাবপত্রের দোকান রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেলায় এসব দোকানপাট এসেছে। জায়গা বরাদ্দ বাবদ মেলা কর্তৃপক্ষ আগেই এসব দোকানীদেন কাছে ১২-১৬ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। দোকানীরা এখনও তাঁদের জায়গা ভাড়ার টাকাও উঠাতে পারেনি। মেলা কর্তৃপক্ষ তাঁদের আবারও মেলার সময় বর্ধিত করার আশ্বাস দিয়েছে।
আজ শনিবার মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, মেলার বর্ধিত সময় ও যাত্রাপালার অনুমোদন বাতিলের পর যাত্রাপালার প্যান্ডেল, মোটরসাইকেল খেলার প্যান্ডেল ও দুটি রাইডস খুলে নেওয়া হয়েছে। কাঠের ও স্টীলের আসবাবপত্রের দোকানপাট রয়েছে। লোকজন কেনাকাটা করছেন। কাঠের আসবাবপত্রের ফিরতি পথে কয়েক জনকে বসে কাঠের ও স্টীলের আসবাবপত্র ক্রেতাদের কাছে হাসিল আদায় করতে গেছে। তাঁরা প্রতিটি আসবাবপত্রের জন্য ১০০ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করছেন। হাসিল আদায়কারী একজন তরুণ নিজেকে স্বর্ণ আহম্মেদ পরিচয় দিয়ে বলে মেলা কমিটির তাঁদের আসবাবপত্রের হাসিল আদায় করতে বলেছে। তাঁরা রসিদে হাসিল আদায় করছেন। তিনি বলেন, ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যে কোন কারণে মেলার অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে মেলার অনুমোদনের জন্য আগামীকাল রোববার মেলার সেবাইত জেলা প্রশাসকের কাছে যাবেন।।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যাত্রাপালার সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তি বলেন, নতুন করে মেলার অনুমোদন দেওয়া হলে যাত্রারও অনুমোদন দিতে হবে। কারণ যাত্রাপালার জন্য তাঁদের লাখ-লাখ লোকসান হয়েছে।
নওগাঁ থেকে আসা স্টীলের দোকানী হামিদুল ইসলাম বলেন, ১০ হাজার টাকা জায়গার ভাড়া দিয়েছি। এখনো একটিও আসবাবপত্র বিক্রি করতে পারিনি। শুক্রবারে মেলা কমিটি দোকান ভেঙে নিয়ে যেতে মাইকিং করেছে। আমরা দোকানের জায়গার ভাড়া, মালামাল আনা ও নিজেদের খাওয়া-দাওয়ায় অনেক খরচা হয়েছে।
ক্ষেতলালের বটতলী এলাকার ফেরদৌস হোসেন মেলায় ১২ হাজার টাকায় একটি আলমিরা কিনেছেন। তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে আলমিরার ৩০০ টাকা খাজনা নিয়েছে। এটা এক ধরণের চাঁদাবাজী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গোপীনাথপুর এস্টেটের সেবাইত শ্রী নরেন্দ্র কৃষ্ণ প্রিয়া বলেন, ১৩ দিনের মেলা আগেই শেষ হয়েছে। আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে মেলার সময় বাড়িয়ে ছিল জেলা প্রশাসন। দুই দিন পর মেলার সেই বর্ধিত সময় বাতিল করেছে। বর্ধিত সময়ের জন্য আগামীকাল আবারও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করব। আসবাবপত্রের হাসিল আদায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। আমরা মেলায় আগে থেকেই হাসিল আদায় করি।
জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতারের সরকারি মুঠোফোন নম্বর কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। একারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছাঃ মনিরা সুলতানাও ফোন রিসিভ করেননি।