ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০২৫: খালেদা জিয়া বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিক এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নেতা জিয়াউর রহমানএর স্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের দুইবারের প্রধানমন্ত্রী, এবং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী এবং বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তার রাজনৈতিক জীবনের নানা ওঠা-পড়া এবং প্রভাব পুরো বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট বগুড়া জেলার গোপালগঞ্জ শহরে। তার বাবা এম এ হক ছিলেন একজন ব্যবসায়ী, আর মা মোছা. কামরুন নেছা ছিলেন গৃহিনী। খালেদা জিয়া শৈশব থেকেই প্রাথমিক শিক্ষার দিকে মনোযোগ দেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। যদিও তার পড়াশোনার দিকে আগ্রহ ছিল, তবে রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি তাকে দ্রুত রাজনীতির দিকে নিয়ে আসে।
রাজনৈতিক যাত্রা ও তার স্বামী জিয়াউর রহমান
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর, বাংলাদেশের রাজনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়। খালেদা জিয়া সেই সময় রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হন এবং জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের পূর্ব রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর, খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক ভূমিকা শুরু করেন। তিনি বিএনপির নেতৃত্বে আসেন এবং ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়, তবে তার সরকারকে বিরোধী দল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং তখন থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
তার দ্বিতীয় শাসনকাল শুরু হয় ২০০১ সালে, যখন বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হয় এবং খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এই সময়কার সরকারের বেশ কিছু নীতি এবং পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিদেশী সম্পর্ক সম্পর্কিত ছিল, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ তাকে বেশ সমালোচিত করেছে।
খালেদা জিয়ার সরকারের সমালোচনা
খালেদা জিয়ার শাসনকালে তার সরকারের বিরুদ্ধে বহু সমালোচনা ওঠে। বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর, বিএনপি সরকার ও জামায়াত-ই-ইসলামী দলের মধ্যে সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশে রাজনীতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ২০০৭ সালে সেনাশাসিত জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর, খালেদা জিয়াকে অনেক সময় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে নিষেধ করা হয় এবং তার কারাবাসও হয়েছিল।
তার শাসনকালে, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মিডিয়া স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। তবে, তিনি দেশটির মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতীয় সুরক্ষা-র বিষয়ে তার সরকারের পদক্ষেপের পক্ষে ছিলেন, যা তার রাজনৈতিক শক্তিকে কিছুটা বৃদ্ধি করেছিল।
কারাবাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন তাকে ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর, তিনি বিএনপি-এর কার্যনির্বাহী এবং দলের নেতৃত্বের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার সমর্থকরা তাকে বিপ্লবী নেতা হিসেবে দেখেন, কিন্তু বিরোধীরা তাকে দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করে।
খালেদা জিয়া বর্তমানে স্বাস্থ্যজনিত কারণে মুক্তির আবেদন করেছেন, তবে বাংলাদেশের সরকার ও বিচারপতি মহল তার মুক্তির বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। তার মুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, কারণ এটি বাংলাদেশের বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার
খালেদা জিয়া তার রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এবং তার নেতৃত্বে দলটি বেশ কিছুবার নির্বাচন জয় করেছে। তার নেতৃত্বে দলটির সংগ্রামী প্রকৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষসমর্থক হওয়ার কারণে অনেক মানুষের সমর্থন রয়েছে।
তবে, তার শাসনামলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করেছে। তার ভবিষ্যত রাজনীতি এবং রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
উপসংহার
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। তার জীবন, শাসন এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি চিরকালীন আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রভাব কেবল বাংলাদেশেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও চিহ্নিত হয়েছে।
MD Abdul Ahmed / USA