সত্যজিৎ দাস:
১৪ ফেব্রুয়ারি এলেই চারদিকে লাল গোলাপ, চকলেট আর প্রেমের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। কেউ ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে দিনটিকে উদযাপন করে, আবার কেউ মনে করে এটি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। তবে প্রশ্ন হলো—ভ্যালেন্টাইনস ডে কি আসলেই কোনো ধর্মীয় দিন, নাকি এটি কেবল এক বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক উৎসব? আর বাংলাদেশে এটি কীভাবে জনপ্রিয় হলো? আসুন, ইতিহাসের পাতা থেকে সত্যটা খুঁজে দেখি।
ভালোবাসার দিন হলেও ইতিহাসের পেছনের যে গল্প হল; ভ্যালেন্টাইনস ডে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব বা কোনো কালো জাদুর দিন। কিন্তু বাস্তবে এর জন্ম প্রাচীন রোমান ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত।
তৃতীয় শতাব্দীর রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস বিশ্বাস করতেন;’ অবিবাহিত সৈন্যরা ভালো যোদ্ধা হয়। তাই তিনি সৈন্যদের বিয়ে নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু এক খ্রিস্টান যাজক,সেন্ট ভ্যালেন্টাইন,গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়ে পড়াতেন। ধরা পড়ার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে ভালোবাসার শহীদ হিসেবে সম্মান জানানো হয়।
তবে,ভ্যালেন্টাইনস ডের শেকড় আরও গভীরে। রোমানরা ফেব্রুয়ারি মাসে “লুপারকালিয়া” নামে এক উর্বরতা উৎসব পালন করত,যা ধীরে ধীরে ভালোবাসার উৎসবে পরিণত হয়।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:উদযাপন না নিষেধাজ্ঞা?
ভ্যালেন্টাইনস ডে জাতিসংঘ বা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃত দিবস নয়। তবে এটি ১০০টিরও বেশি দেশে উদযাপিত হয়। কিছু দেশে এটি সরকারি ছুটির দিন,যেমন ফিলিপাইনস, আর্জেন্টিনা,দক্ষিণ কোরিয়া।
অন্যদিকে,সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া-তে এটি নিষিদ্ধ বা নিরুৎসাহিত করা হয়, কারণ এটি তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে কবে থেকে জনপ্রিয় হলো?
বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডের জনপ্রিয়তা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে।
১) ১৯৯৩ সালে “সাপ্তাহিক প্রচার” ম্যাগাজিন প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে লিখেছিল।
২) ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে এফএম রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে ভালোবাসা দিবসের আলোচনা শুরু হয়।
৩) ২০০০ সালের পর থেকে এটি ঢাকার তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে থাকে,বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের মাঝে।
এখন এটি বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়। আরও মজার ব্যাপার হলো,পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইনস ডে প্রায় একই সময়ে হওয়ায় এটি ভালোবাসার মাস হিসেবেও পরিচিত হয়েছে।
সংস্কৃতির সংঘর্ষ:ভালোবাসা নাকি বিদেশি প্রভাব?
অনেকে মনে করেন,এটি পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ। তবে অন্যদিকে অনেকে যুক্তি দেন, ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটি দিন থাকা দোষের কিছু নয়। বর্তমান সময়ে এই দিন শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই,বরং বন্ধুত্ব, পারিবারিক সম্পর্ক ও মানবিক ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।
পরিশেষে বলা যায়,ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের সিদ্ধান্ত যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কেউ উদযাপন করতে চাইলে করতে পারে,না চাইলে নয়। তবে ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা জরুরি। ভালোবাসা শুধুমাত্র একটি দিনে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিদিনই ভালোবাসা প্রকাশ করা উচিত।