চব্বিশ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর ‘প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি’ নিজেই দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—এমন বিস্ফোরক দাবি করেছে বিবিসি। বুধবার (৯ জুলাই) প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপের অডিও রেকর্ডিংকে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটি। এই অডিওতে শেখ হাসিনাকে একটি সরকারি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে শোনা যায়।
অডিও যাচাইয়ে মিলেছে সত্যতা
বিবিসি জানিয়েছে, ফোনালাপটি ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে করা হয়। এটি ২০২৫ সালের মার্চে ফাঁস হয়। রেকর্ডিংটির ফরেনসিক বিশ্লেষণ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইয়ারশট’, যারা মানবাধিকার সংক্রান্ত অডিও যাচাইয়ের জন্য খ্যাত।
বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন—
- অডিওতে কোনো ধরনের সম্পাদনা বা বিকৃতি ছিল না
- শব্দের ছন্দ, শ্বাস-প্রশ্বাস ও স্বরের ধরন শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিলে যায়
- ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি (ENF) বিশ্লেষণে রেকর্ডিংয়ের প্রকৃত সময়-স্থান নিশ্চিত করা গেছে
বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-ও ফাঁস হওয়া কণ্ঠস্বরকে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে।
নিহতের সংখ্যা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের (OHCHR) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের গণবিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রায় ১,৫০০ জন নিহত হয়েছেন, যার অধিকাংশই শিক্ষার্থী ও তরুণ আন্দোলনকারী। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” বলে আখ্যায়িত করেছে।
ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেন,
“এই রেকর্ডিংগুলো শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রমাণ হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো যাচাইযোগ্য এবং অন্য প্রমাণাদির সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।”
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লিখিত অডিও রেকর্ডিং সম্পর্কে বলেছেন,
“উক্ত রেকর্ডিংটির সত্যতা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।”
তবে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে এবং সম্ভাব্য বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে আইনি মহলে কথাবার্তা চলছে।
বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট
২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের বিক্ষোভকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তবে আন্দোলনকারীরা সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন।
ফাঁস হওয়া এই অডিও যদি নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হিসেবে আন্তর্জাতিক আদালতে গৃহীত হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের রাজনীতি ও শেখ হাসিনার ভাবমূর্তির ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।