কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা’কে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত আশ্রয়, তার বক্তব্যের রাজনৈতিক প্রভাব এবং ভারতের অবস্থান নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাংবাদিক নিয়েভ বার্কার।
কী বলেছেন ড. ইউনূস?
ড. ইউনূস জানান, ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের অনুরোধ জানান। কারণ, হাসিনার বক্তব্য বাংলাদেশের ভেতরে উত্তেজনা তৈরি করছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সমস্যায় ফেলছে। তবে মোদি জবাবে জানান,
“ভারত হলো এমন একটি দেশ যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত। আমি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না।“
প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তুঙ্গে। শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় ছিলেন এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী শাসন, দুর্নীতি, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে উঠেছে। নির্বাচন-পূর্ব উত্তেজনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার মুখে হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ভারতের সাথে হাসিনার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ। ভারত বরাবরই হাসিনাকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে দেখে এসেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মোদি সরকারের ‘সামাজিক মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করতে না পারার’ ব্যাখ্যা কিছুটা কূটনৈতিক চতুরতার উদাহরণ বলেই মনে হচ্ছে।
এটি ইঙ্গিত করে যে, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে আশ্রয় দিলেও, তার কথাবার্তা বা কর্মকাণ্ডের দায়ভার নিতে প্রস্তুত নয়।
ভারতের ভূমিকা: স্বার্থ না দায়?
ভারতের বর্তমান অবস্থান স্পষ্ট — শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করলেও, প্রকাশ্যে তার জন্য আন্তর্জাতিক সমালোচনা বা অস্থিরতা টেনে আনতে চায় না। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্বাধীনতার অজুহাত দিয়ে মোদি নিজের অবস্থান নিরপেক্ষ রাখার চেষ্টা করেছেন।
এটা একইসঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের জন্য একটি কৌশলগত বার্তাও — ভারত সামনের দিনগুলোতে সরাসরি হস্তক্ষেপ নাও করতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা ছিলেন এক অতি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তার অনুপস্থিতি বাংলাদেশের ভেতরে বিরাট শূন্যতা তৈরি করেছে। তবে ড. ইউনূসের ভাষ্যমতে, যদি হাসিনা সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উত্তেজনাকর বক্তব্য চালিয়ে যান, তবে তা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশেষ করে, বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে জনগণের মাঝে তাঁর এখনো অনেক জনপ্রিয়তা আছে। ফলে তার বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নতুন সরকারকেও গণআন্দোলন বা রাজনৈতিক চাপে পড়তে হতে পারে।
ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো —
১. শেখ হাসিনার ভারত অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
২. ভারত কৌশলগতভাবে ‘নন-কমিটাল’ বা নিরপেক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে।
৩. বাংলাদেশের ভেতরের রাজনীতিতে সামাজিক মাধ্যম এখন বিরাট ভূমিকা রাখবে।
৪. শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ ভূমিকা ও বক্তব্য নতুন সরকারের জন্য বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।