ঢাকা প্রতিনিধি:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রোববার (১ জুন) বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল পাঁচটি চার্জ আমলে নেয়।
একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অপর অভিযুক্ত সাবেক আইজিপি মামুন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালের এই বিচার কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়—যা দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটলো।
দুপুর ১২টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম। এ সময় অন্যান্য প্রসিকিউটরগণও উপস্থিত ছিলেন।
চার্জশিটে বলা হয়, গত জুলাই-আগস্টে ‘গণঅভ্যুত্থান’-এর সময় নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হামলার নির্দেশনা ও তার বাস্তবায়নে অভিযুক্তদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। শেখ হাসিনাকে এ ঘটনায় ‘মাস্টারমাইন্ড’ ও ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের বিরুদ্ধে ‘গুলির নির্দেশ’ দেওয়ার অভিযোগ এবং সাবেক আইজিপি মামুনের বিরুদ্ধে তা বাস্তবায়নের দায় আনা হয়েছে।
চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, ৩-৫ আগস্টের মধ্যে ড্রোন, হেলিকপ্টার, এপিসি ও ভারী অস্ত্র ব্যবহারে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরাসরি গুলির নির্দেশ, হত্যার হুমকি ও পঙ্গু করে দেওয়ার আদেশ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
প্রসিকিউশনের দাবি, তাদের হাতে রয়েছে অভিযুক্তদের কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, উদ্ধার করা বুলেট, হেলিকপ্টার ফ্লাইট শিডিউলসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত। সাক্ষী হিসেবে রয়েছে ৮২ জন, যাদের মধ্যে রয়েছেন—সরকারি উপদেষ্টা, পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী এবং নিহতদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী।
মামলার পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে প্রথমটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘উস্কানি ও প্ররোচনা’, দ্বিতীয়টি গুলির নির্দেশ এবং বাকি তিনটি সুনির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নের ঘটনা সংশ্লিষ্ট।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট প্রথম অভিযোগ উত্থাপন করা হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, যা থেকে এই মামলার সূত্রপাত।