অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কয়েকটি সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষত, চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া, রাখাইনে মানবিক করিডোর তৈরি, কাতারকে সামরিক কারখানা স্থাপনের আহ্বান এবং আইএমএফ ঋণ শর্তে এনবিআর বিলুপ্তির গুঞ্জন—এই ইস্যুগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে: এই সরকারের আসল ম্যান্ডেট কী?
ম্যান্ডেট বিতর্ক: তত্ত্বাবধায়ক না গণঅভ্যুত্থানের সরকার?
অর্থনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, “এই সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো—রুটিন ওয়ার্ক করে নির্বাচন দেওয়াই ম্যান্ডেট।”
অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “এটা গণঅভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কারই আমাদের কাজ। প্রত্যেকটি বিষয়ে আমাদের পূর্ণ ম্যান্ডেট আছে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি
- বিএনপি, সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলনসহ একাধিক রাজনৈতিক দল বলছে, এই সরকার নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো জাতীয় বা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
- বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “প্রফেসর ইউনূস রাষ্ট্রকে নিয়ে ব্যবসা করতে চাইছেন।”
- সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “বন্দর ও করিডোর ইস্যুতে সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। এসব জাতীয় স্বার্থবিরোধী।”
বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়েও প্রশ্ন
১৩ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিডা আয়োজিত বিনিয়োগ মতবিনিময় সভায় বিএনপি ও বিজেপি অংশ নেয়নি।
বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, “নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করে বিনিয়োগ বাড়ানো এক ধরনের সার্কাস।”
সিপিবির এম এম আকাশ বলেন, “বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা ছাড়া বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না।”
পরিসংখ্যান যা বলছে
- চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে FDI কমেছে ২৬%
- মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৮.৬৮%, যা অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে মন্থরতার ইঙ্গিত
বন্দর ও করিডোর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য
১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “পৃথিবীর সেরা অভিজ্ঞদের দিয়ে বন্দরের ব্যবস্থাপনা করতে হবে। মানুষ রাজি না হলে রাজি করাতে হবে।”
এই মন্তব্যে বাম দলগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া। তারা বলছে, এটা “ঔদ্ধত্যপূর্ণ” এবং “অবৈধ হস্তক্ষেপ”।
সিপিবি হুমকি দিয়েছে, “কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চসহ আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
রাখাইন করিডোর ও সামরিক কারখানা
কাতার সফরে সরকার কাতারকে বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রেস সচিবের দাবি, “রাখাইন করিডোর রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বড় সংস্কারের অংশ।”
উপসংহার:
সরকারের ভাষ্যে প্রতিটি উদ্যোগ “সংস্কার” হিসেবে ব্যাখ্যা পেলেও বিরোধীদল ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি ম্যান্ডেটের সীমা লঙ্ঘন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংযত ও স্বচ্ছ থাকা জরুরি।