শুক্রবার হোয়াইট হাউসে গভর্নরদের বার্ষিক শীতকালীন সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছিল। সেই টাকা এমন একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে গেছে, যার নাম কেউ শোনেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র দুইজন কর্মী ছিলেন। ভাবা যায়!”
তিনি আরও বলেন, “একটি ছোট ফার্ম, যেখানে হয়তো আগে এখানে-ওখানে ১০ হাজার ডলার করে সহায়তা আসত। কিন্তু হঠাৎ তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়ে গেল! নিশ্চয়ই তারা এখন খুব ধনী হয়ে গেছেন।”
বিদ্রূপ করে ট্রাম্প আরও বলেন, “তাদের খুব শিগগিরই কোনো বিখ্যাত বিজনেস ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে দেখা যাবে—’মহাপ্রতারক (গ্রেট স্ক্যামারস)’ হিসেবে!”
ভারতের প্রকল্প নিয়েও ট্রাম্পের কটাক্ষ
বাংলাদেশ প্রসঙ্গের আগে ট্রাম্প ভারতের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ২১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কেন নয়? আমিও চাই, ভোটার বেশি আসুক!”
ট্রাম্পের এই মন্তব্যে বোঝা যায়, তিনি বিদেশে মার্কিন সাহায্য পাঠানোর বিরোধী এবং এসব অনুদানকে তিনি অপচয় হিসেবে দেখছেন।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ‘ডিওজিই’ (সরকারি দক্ষতা বিভাগ) চালু করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল সরকারি ব্যয় কমানো এবং অপ্রয়োজনীয় কর্মসূচিগুলো বাতিল করা।
এই দপ্তরের সুপারিশে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রকল্পসহ মোট ১৭টি আন্তর্জাতিক সাহায্য কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে ‘অবাস্তব ও বিভ্রান্তিকর’ বলে দাবি করেছে।
এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অনুদানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয় এবং সমস্ত অনুদান যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়। ট্রাম্পের এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করে। এই ২৯ মিলিয়ন ডলার কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে গেছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্য মূলত তার রাজনৈতিক প্রচারণার কৌশল, যেখানে তিনি মার্কিন জনগণের সামনে বিদেশে পাঠানো সাহায্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান।
একজন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ বলেন, “ট্রাম্প সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সহায়তা পাঠানোর বিরোধিতা করেছেন। তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে এবং এর পেছনে সত্যতা রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া দরকার।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দিতে পারে এবং মার্কিন প্রশাসন নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, এই অভিযোগ কতটা সত্য এবং মার্কিন প্রশাসন ও বাংলাদেশ সরকার কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানায়।