দিল্লির সন্ধ্যা নামে, জানালার পাশের সোফায় বসে আছেন শেখ হাসিনা। চোখে মুখে এখনো সেই চিরচেনা আত্মবিশ্বাস, যেন কিছুই হয়নি। চায়ের কাপটা টেবিলে রাখেন, আঙ্গুলে আলতো করে ছোঁয়ান। কিন্তু বাস্তবতা কি.৮০ বছর পেরিয়ে যাবে অথচ তার মাথা থেকে এখনো এসব বুদ্ধি যাওয়ার নাম নেই। এখনো তার একমাত্র লক্ষ্য বাংলাদেশকে অশান্ত করা। নিজের দলীয় নেতাদের নিরাপত্তার কথা একবারও ভাবেননি, দেশের কথা ভাবেননি। শুধু নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার চিন্তা করেছেন।
দিল্লির দুপুরের তীব্র গরম, বাইরের তপ্ত বাতাস যেন ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে। ভারী পর্দা টানা একটি রুমে, কোণায় বসে আছেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। সামনে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ, তার মুখাবয়বে কোনো অনুশোচনা নেই, বরং চোখে-মুখে এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাসের ছাপ। বিপরীত দিকের সোফায় বসে থাকা ব্যক্তি, সন্তুষ্ট দৃষ্টিতে হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, যিনি ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কাছে দেবতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড।
অজিত দোভালের চোখে তৃপ্তির ছাপ, সব কিছু তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে। হাসিনা এখনও হাল ছাড়েননি, বরং তার নেতিবাচক কৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রশ্ন একটাই, কীভাবে এত দৃঢ় ও নির্লিপ্ত থাকতে পারেন হাসিনা? এর উত্তর জানেন অজিত দোভাল, যিনি জানেন—সবটাই তাদের পরিকল্পনার অংশ।
ভারত বহুবার বাংলাদেশে তাদের কৌশলগত প্রভাব বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নেতাকে সমর্থন দিয়েছে। শেখ হাসিনা ছিলেন তাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কান্ডারী। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। বাংলাদেশের জনগণ ইতোমধ্যেই তার প্রতি নিজেদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন ভারতের উচিত হাসিনাকে নিয়ে নতুন করে ভাবা। যদি তারা আবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে তাহলে সেটি হবে বিশাল এক ভুল। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে সচেতন। ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ অনেক বেশি সরব। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভেতরেই ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার এই আত্মবিশ্বাসের পেছনে তিনটি বড় কারণ রয়েছে:
মোদির সরাসরি সহযোগিতা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করছে। মোদির রাজনৈতিক উপদেষ্টা অজিত দোভাল নিয়মিত হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাকে সহযোগিতা করছে।
মানসিক প্রস্তুতি ও ট্রেনিং: শেখ হাসিনাকে এমনভাবে বোঝানো হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি, যেন তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাকে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে ট্রেনিং দিচ্ছেন।
গোপন রাজনৈতিক সমর্থন: দিল্লির ভেতরও একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী মনে করে, শেখ হাসিনা এখনো তাদের জন্য প্রয়োজনীয়। তারা চান, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে তিনি কোনো না কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখুন। তাই, কৌশলগতভাবে তাকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশের জনগণ কি তাকে আবার ক্ষমতায় ফিরতে দেবে? ভারত বহুবার বাংলাদেশে তাদের কৌশলগত প্রভাব বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নেতাকে সমর্থন দিয়েছে, আর হাসিনা ছিলেন তাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মুখ। কিন্তু পরিস্থিতি এখন বদলেছে।
বাংলাদেশের জনগণ ইতোমধ্যেই তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতকে হাসিনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। যদি তারা আবারও তাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে, তবে সেটা হবে একটি বিশাল ভুল। কারণ, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এখন অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং তারা ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে সরব।
শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ-এর ভেতরে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় অভ্যন্তরে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, এবং অনেক নেতা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনা তাদের একরকম ছেড়ে চলে গেছেন, এবং এখন দলের মধ্যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তবে এমন স্বার্থপর এবং নির্লজ্জ নেতা বিশ্ব ইতিহাসে খুব কমই পাওয়া যায়। বাংলাদেশ বদলে গেছে, মানুষ বদলে গেছে, জনগণ এখন আর সেই পুরনো ভুল করবে না। শেখ হাসিনার সময় শেষ, কিন্তু প্রশ্ন একটাই—তিনি কি এটা বুঝতে পারছেন? সময়ের অপেক্ষা।
ঘরের ভেতরে ধীরে ধীরে বাজতে থাকা ঘড়ির কাটা একবার কাঁপে, রাত ঘনিয়ে আসে। দিল্লির আকাশের তারাগুলো দূরে কোথাও হারিয়ে যায়। স্বৈরাচারী হাসিনা চোখ বন্ধ করেন, কিন্তু ঘুম আসে না।