লন্ডন, ফেব্রুয়ারি ২০২৫: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের সাথে যদি একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাহলে যুক্তরাজ্য ইউক্রেনে নিজেদের সেনা মোতায়েন করতে প্রস্তুত। এটি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক নতুন মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা পশ্চিমা সামরিক কৌশলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
বর্তমানে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য একটি সমঝোতা আলোচনার বিষয় সামনে আসছে। যদিও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি, তবে ব্রিটেন এবং ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনের পুনর্গঠন ও নিরাপত্তার জন্য নতুন সামরিক উপস্থিতির কথা বিবেচনা করছে।

স্টারমারের অবস্থান: কেন ব্রিটিশ সেনা পাঠানোর চিন্তা?
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে যে, শান্তি চুক্তির পর ইউক্রেনের স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্রিটিশ সেনারা সেখানে মোতায়েন হতে পারে। স্টারমার সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন,
“এটি কোনো যুদ্ধকালীন পদক্ষেপ নয়, বরং ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও অবকাঠামো পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।”
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন,
“যদি শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য সামরিক প্রশিক্ষক, পরামর্শদাতা এবং পুনর্গঠনের বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হতে পারে।”
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য জটিলতা
রাশিয়া ইতোমধ্যে ন্যাটো সেনাদের ইউক্রেনে উপস্থিতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন,
“যদি কোনো বিদেশি সেনা ইউক্রেনে মোতায়েন করা হয়, তাহলে আমরা এটিকে রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করব এবং কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
রাশিয়ার এই অবস্থান স্পষ্টতই বোঝায় যে, ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েনের ফলে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং এটি রাশিয়ার কৌশলগত প্রতিক্রিয়া উস্কে দিতে পারে।
ন্যাটোর ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ন্যাটো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়ে একমত হয়নি। তবে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যদি ইউক্রেন-রাশিয়া মধ্যে একটি কার্যকর শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তবে তারা পুনর্গঠন ও নিরাপত্তা মিশনের জন্য সামরিক উপস্থিতি বিবেচনা করবে।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন,
“আমরা চাই ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে একটি নিরাপদ এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক। তবে সেখানে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ: ঝুঁকি নাকি কৌশলগত পদক্ষেপ?
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন করা হলে এটি রাশিয়ার সাথে সরাসরি সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে অন্যদিকে, এটি ইউক্রেনকে আরও শক্তিশালী করতে এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ জন ডেভিস বলেন,
“ব্রিটেন যদি সেনা পাঠায়, তবে এটি হবে ইউক্রেনের প্রতি ন্যাটোর দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। তবে এটি রাশিয়ার জন্য নতুন সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।”
কিয়ার স্টারমার সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরবর্তী ধাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে। তবে এই পদক্ষেপ শান্তি বজায় রাখবে নাকি নতুন উত্তেজনা তৈরি করবে, তা সময়ই বলে দেবে।
🔥 আপনার মতামত কী? ব্রিটেনের সেনা ইউক্রেনে মোতায়েন করা উচিত নাকি এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ? কমেন্টে জানান! ⬇️