বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য (সেভেন সিস্টার্স) নিয়ে করা মন্তব্যে ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কেউ তার মন্তব্যকে ‘আক্রমণাত্মক’, কেউ ‘বিপজ্জনক’ আবার কেউ ‘বিস্ময়কর’ বলে অভিহিত করেছেন।
৬ আগস্ট ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ যদি অস্থিতিশীল থাকে, তা মিয়ানমার এবং সেভেন সিস্টার্সে ছড়িয়ে পড়বে।”
ড. ইউনূস কী বলেছেন?
২৬-২৯ মার্চ চীন সফরের সময়, বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক সংলাপে ড. ইউনূস বলেন, “নেপাল ও ভুটান স্থলবেষ্টিত দেশ, ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যও স্থলবেষ্টিত। আমরাই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।” তিনি এসব দেশের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন এবং চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
ড. ইউনূসের বক্তব্যের পর ভারতের বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
- আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, “বাংলাদেশকে সেভেন সিস্টার্সের ‘অভিভাবক’ বলা আপত্তিকর ও নিন্দনীয়। এটি ভারতের কৌশলগত দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।”
- মোদীর উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল প্রশ্ন করেন, “ভারতের সাতটি রাজ্যের স্থলবেষ্টিত হওয়ার সঠিক তাৎপর্য কী?”
- ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রি একে ‘বিস্ময়কর’ মন্তব্য বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, “এমন মন্তব্যের কোনো অধিকার তার নেই।”
- ত্রিপুরার রাজনীতিক প্রাদ্যত মানিক্য বলেন, “আমাদের উচিত বাংলাদেশ ভেঙে সাগরে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করা।”
- প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক প্রফুল বকশী বলেন, “আমরাও বাংলাদেশের টুঁটি চেপে ধরতে পারি এবং সাগরপথে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারি।”
বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসা
ড. ইউনূসের বক্তব্য বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
- অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাদিকুর রহমান খান লিখেছেন, “বাংলাদেশ সত্যিই দক্ষিণ এশিয়ার ড্রাইভিং সিটে বসতে যাচ্ছে।”
- মো. ইয়াসিন কবির তার বক্তব্যের ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, “আমাদের আরেকজন নেতা দেখান যিনি তার মতো এভাবে কথা বলতে পেরেছেন।”
ভারত সরকার এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি
ভারতের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, দেশটির সরকার এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৩১ মার্চ ড. ইউনূসকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
সেভেন সিস্টার্স ও শিলিগুড়ি করিডোর কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযোগের একমাত্র পথ শিলিগুড়ি করিডোর। চীন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের সংলগ্ন ৬০ কিমি দীর্ঘ এবং ২২ কিমি প্রশস্ত এই করিডোর ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ভূখণ্ড এই অঞ্চলের জন্য বাণিজ্য ও যোগাযোগের মূল মাধ্যম হওয়ায় দেশটি কৌশলগত সুবিধা নিতে পারে।
ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, তবে বাংলাদেশে অনেকেই এটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত বলে প্রশংসা করছেন। ভারতের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার অভাবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও কূটনৈতিক আলোচনা হতে পারে।