দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনমনে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে আজ শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গুরুত্বপূর্ণ এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বৈঠক শেষে, প্রায় কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই শুরু হয় এই অনির্ধারিত বৈঠক।
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শুরু হওয়া এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। উপস্থিত রয়েছেন সরকারের ১৯ জন উপদেষ্টা, যাঁরা সবাই পতাকাবাহী গাড়িতে করে সম্মেলনস্থলে পৌঁছান। এনইসি ভবনের সম্মেলন কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ১৯টি পতাকাবাহী গাড়ি ইতোমধ্যে সংবাদকর্মী ও বিশ্লেষকদের দৃষ্টি কেড়েছে।
যদিও বৈঠকের আনুষ্ঠানিক এজেন্ডা এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে মূলত আলোচনা হচ্ছে। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা চলছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক শুধু উপদেষ্টা পর্যায়ের সাধারণ আলোচনা নয়, বরং এটি আগামী দিনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত বহন করতে পারে। যেহেতু প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং সব সদস্য উপস্থিত, তাই এটিকে একটি ‘ক্লোজড-ডোর স্ট্র্যাটেজিক কনসালটেশন’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বৈঠকের পটভূমিতে রয়েছে লন্ডনে বাংলাদেশি প্রভাবশালীদের দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট সম্পদ জব্দের ঘটনা, যা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের সম্পত্তি ফ্রিজ করার সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশ সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়েছে।
এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, বিদ্যুৎ-সংকট ও সুশাসনের অভাব নিয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, উপদেষ্টা পরিষদের ভূমিকা ও কৌশল এখন গুরুত্বের কেন্দ্রে।
বৈঠকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সাংবাদিকদের সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে এবং গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং দেওয়া হয়নি।
এই অনির্ধারিত ও রুদ্ধদ্বার বৈঠক ঘিরে জনমনে এখন একটাই প্রশ্ন—এটি কী একটি বড়ো রাজনৈতিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস? বিশেষত যখন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, তখন এই বৈঠক থেকে কী বার্তা আসবে, সেটাই সকলের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।