রাশিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, ইউক্রেনে ন্যাটো বাহিনীর কোনও ধরনের উপস্থিতি তারা মেনে নেবে না এবং এটি তাদের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এ কথা জানান।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সৌদি আরবের মধ্যস্থতায়, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ কৌশল এবং সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
ল্যাভরভের কড়া সতর্কবার্তা
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, “ন্যাটো যদি ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের চেষ্টা করে, তাহলে তা সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমান হবে। আমরা এটা কখনোই মেনে নেব না এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।”
তিনি আরও বলেন, “ন্যাটো বাহিনী ইউক্রেনে প্রবেশ করলে এটি শুধু রাশিয়ার জন্য নয়, পুরো ইউরোপের জন্য অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে। আমরা চাই না ইউক্রেন সংঘাত আরও ব্যাপক হোক, তবে পশ্চিমা দেশগুলো যদি তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে থাকে, তাহলে রাশিয়াও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাবে।”
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “আমরা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইউক্রেনের জনগণ তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমরা সব ধরনের সহায়তা প্রদান করব।”
রুবিও আরও বলেন, “ন্যাটো এবং তার মিত্ররা ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সব উপায় অনুসন্ধান করছে। তবে, এই আলোচনায় কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক বর্তমানে অত্যন্ত উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে, এবং সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক কিছুটা হলেও উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। তবে, ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার কঠোর অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
অনেক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ন্যাটো বাহিনী যদি ইউক্রেনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করে, তাহলে এটি রাশিয়াকে আরও বড় সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করতে পারে। এটি শুধুমাত্র ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিধি বাড়াবে না, বরং ইউরোপ এবং অন্যান্য অঞ্চলেও নতুন করে সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
সৌদি আরব এই আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে এবং তারা চায়, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একটি সমঝোতায় আসুক যাতে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা যায়। সৌদি আরবের এই উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা করা হচ্ছে, কারণ তারা এর আগে কয়েক দফা যুদ্ধবন্দি বিনিময় এবং কূটনৈতিক আলোচনা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
যদিও এই বৈঠক থেকে কোনো তাৎক্ষণিক সমাধান বেরিয়ে আসেনি, তবে এটি প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক মহল এখনো কূটনৈতিক পথে এই সংকটের সমাধান চায়। সৌদি আরব আশা করছে যে, ভবিষ্যতে আরও উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের পথ খোঁজা সম্ভব হবে।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। রাশিয়া যদি ন্যাটো সেনার উপস্থিতিকে যুদ্ধ ঘোষণার সমান মনে করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে, যা রাশিয়ার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
বিশ্ব এখন অপেক্ষায় আছে, এই আলোচনার ফলে ভবিষ্যতে ইউক্রেন যুদ্ধ কোন পথে এগোয়। তবে একথা স্পষ্ট যে, ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো দ্রুত সমাধানের পথে নেই এবং রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে।