আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটি। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কঠোর নজরদারি ও অভিযান জোরদার
রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার রাত ১২টা থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত) ঢাকার ৫০টি থানায় মোট ৫০০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করেছে।
এছাড়া, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত স্থানে মোট ৫৪টি চেকপোস্ট পরিচালিত হয়েছে। ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, এসব টহল এবং চেকপোস্টের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর টহলও জোরদার করা হয়েছে:
- সিটিটিসি (সন্ত্রাস দমন ইউনিট): ৭টি টহল দল
- অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ): ৪টি টহল দল
- র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব): ১০টি টহল দল
- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন): ৩১টি চেকপোস্ট পরিচালনা
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে “অপারেশন ডেভিল হান্ট” অভিযানে ৬৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য মামলার পরোয়ানাভুক্ত ৯৯৯ জন আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকায় সাঁড়াশি অভিযান, ২৪৮ জন গ্রেপ্তার
ডিএমপি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ২৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে:
- ১৪ জন ডাকাত
- ১৬ জন পেশাদার ছিনতাইকারী
- ৭ জন চাঁদাবাজ
- ১১ জন চোর
- ২২ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি
- ৪৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামি
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। অপরাধীরা যতই সংগঠিত হোক, কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।”
কোর কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- তল্লাশি ও টহল বৃদ্ধি
- রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে তল্লাশিচৌকি বাড়ানো হবে।
- অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হবে।
- যৌথ বাহিনী গঠন করে নির্দিষ্ট এলাকায় জোরদার অভিযান পরিচালিত হবে।
- সুরক্ষা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি
- রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের অতিরিক্ত প্যাট্রল মোতায়েন থাকবে।
- ডিএমপি, বিজিবি, আনসার ও কোস্ট গার্ডের সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল কেনা হবে, যাতে অলিগলিতে দ্রুত টহল দেওয়া যায়।
- ৫০০ এপিবিএন সদস্যকে ডিএমপির সঙ্গে যুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজে লাগানো হবে।
- অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
- থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হবে।
- সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
- সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও অস্ত্র জব্দ
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে:
- ৩টি ছুরি
- ৪টি চাকু
- ১টি চাপাতি
- ১টি দা
- ৪৯ কেজি ৮৭০ গ্রাম গাঁজা
- ৭০৪ পিস ইয়াবা
ডিএমপি জানিয়েছে, রাজধানীতে চুরি, ছিনতাই ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই কার্যক্রমের মাধ্যমে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অপরাধ প্রবণতা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ডিএমপি এবং অন্যান্য বাহিনীগুলোর টহল ও অভিযান বাড়ানোর ফলে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার অংশ হিসেবে এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অপরাধীদের দমন করে নিরাপদ নগর গড়ার লক্ষ্যে যৌথ বাহিনীর কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। অপরাধ প্রবণতা কমাতে এবং নগরবাসীকে নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার অভিযান ও টহল ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ঢাকা মহানগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।