মাগুরায় ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের শিকার আট বছর বয়সী এক শিশুর জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি চারবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’-এর (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) শিকার হয়েছে। পাশাপাশি তার শরীরে গুরুতর জটিলতা দেখা দিয়েছে।
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, শিশুটির চিকিৎসা ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এর শিশুরোগের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (পিআইসিইউ) চলছে। প্রতিদিন স্ট্যান্ডার্ড আইসিইউ প্রটোকল অনুসারে তার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে এবং সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বুধবার শিশুটি চারবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’-এর শিকার হয়। প্রতিবারই সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) দিয়ে তাকে স্থিতিশীল করা হয়। এছাড়া রক্তে লবণের ভারসাম্যহীনতার কারণে তাকে ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। তার রক্তচাপ অত্যন্ত কম, যা ৬০/৪০ মিমি পারদের নিচে নেমে গেছে।
সিএমএইচের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসা পর্ষদ শিশুটির জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী দেশবাসীর কাছে শিশুটির সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছে।
নির্যাতনের অভিযোগ ও অভিযুক্তদের রিমান্ড
শিশুটির মা বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত শিশুর বোনের শ্বশুরের সাত দিনের রিমান্ড এবং স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে উপস্থিত হন। সেদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতেই শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে, শনিবার সন্ধ্যায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়, যেখানে এখনো তার জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
দেশজুড়ে নিন্দা ও বিচারের দাবি
এই নির্মম ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এখন গোটা দেশ তাকিয়ে আছে শিশুটির সুস্থতা এবং ন্যায়বিচারের দিকে।