আজ ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের ৫৫তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এটি বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের দিন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে দেশকে এগিয়ে নেয়। এই বিশেষ দিনে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং স্বাধীনতার তাৎপর্য তুলে ধরা হবে।
দীর্ঘ শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালির লড়াই চলে আসছিল বহু বছর ধরে। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তৎকালীন মেজর (পরে রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, যা টানা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়।
দিবসটি উদযাপনের কর্মসূচি
আজকের দিনটি উদযাপনে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
🔹 সকালের আয়োজন:
প্রত্যুষে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ ও বিদেশি কূটনীতিকরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
🔹 সরকারি ও বেসরকারি ভবন:
সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে।
🔹 সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান:
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কুচকাওয়াজ, খেলাধুলা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।
🔹 গণমাধ্যমের আয়োজন:
জাতীয় পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বাণী
🔹 রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন:
তিনি বলেছেন, “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা বিজয় অর্জন করি। আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।”
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে।”
🔹 প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস:
তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “স্বাধীনতা আমাদের আত্মমর্যাদা ও অধিকার রক্ষার সংগ্রামের চূড়ান্ত ধাপ। দেশের মানুষ গত ১৬ বছর ধরে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল। তবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান জনগণকে স্বৈরশাসনের হাত থেকে মুক্ত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সরকার সুশাসন, ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনায় দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার শপথ নিতে হবে।”
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালায়, যার মধ্যে ২৫ মার্চের ‘কালরাত্রি’ ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস অধ্যায়।
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
আজকের দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতা দিবস শুধু উদযাপনের নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেওয়ার দিন।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে দেশজুড়ে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্মরণ করবে। দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান জানানো হবে। জাতি আজ শপথ নেবে—মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে এক হয়ে কাজ করবে।