বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর করেছেন। সফরের সময় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা লাভ করেছে।
সফরের প্রধান দিকগুলো:
- বিনিয়োগ ও ঋণ চুক্তি:
সফরের সময়, চীন বাংলাদেশকে ২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ও ঋণ প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সাহায্য করবে এবং শিল্প, বাণিজ্য ও অবকাঠামো খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। - স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা:
চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার পরিসর বৃদ্ধি করেছে। কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল বিশেষভাবে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া, চট্টগ্রাম থেকে কুনমিংয়ের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যা স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সহজ করবে। - তিস্তা নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা:
সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নদী ব্যবস্থাপনা, বিশেষত তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন প্রকল্পে চীনা কোম্পানির অংশগ্রহণ। চীনকে ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যদিও ভারতীয় আপত্তির কারণে পূর্বে তিস্তা প্রকল্প থেমে গিয়েছিল, তবে এবার চীন আবার কাজ শুরু করতে প্রস্তুত। - নদী শাসন ও ড্রেজিং:
বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনায় চীনের পরামর্শ চাওয়ার পাশাপাশি, নদী শাসন ও ড্রেজিংসহ নানা পরিকল্পনা আলোচনায় এসেছে। এতে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হতে পারে। - বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা:
বাংলাদেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক খাতেও সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
এই সফরের ফলস্বরূপ বাংলাদেশের চীনের সাথে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিশেষত বিনিয়োগ ও ঋণের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। স্বাস্থ্য খাতে চীনের সহায়তা এবং তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে, ভারতীয় প্রতিক্রিয়া এবং ভূরাজনৈতিক অবস্থান ভবিষ্যতে সম্পর্কের স্থায়িত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া, চীনের সাথে সম্পর্কের এই গভীরতা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি নতুন রূপ ধারণ করতে পারে, যা ভারতের সাথে তিক্ত সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়াস হতে পারে।