অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশ এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে শক্তিশালী ও উদ্যমী। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠান তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন অতীতের যেকোনো প্রজন্মের স্বপ্নের চাইতে দুঃসাহসী। তারা যেমন নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চায়, তেমনি একই আত্মবিশ্বাসে নতুন পৃথিবীর সৃষ্টি করতে চায়। নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে তারা নেতৃত্ব দিতে চায়। সে নেতৃত্ব দেবার জন্য তারা প্রস্তুত। ছেলেরাও প্রস্তুত, মেয়েরাও প্রস্তুত। তারা ঘুনে ধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে তাদের স্বপ্নের নতুন সভ্যতা গড়তে চায়।
তিনি বলেন, যে সভ্যতার মূল লক্ষ্য থাকবে পৃথিবীর সকল সম্পদের উপর প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা, প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন দেখার এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সকল সুযোগ নিশ্চিত করা, মানুষের জীবনযাত্রাকে এমন ভাবে গড়ে তোলা যাতে করে পৃথিবীর অস্তিত্ব কোনরকমে বিঘ্নিত না-হয় এবং পৃথিবীর উপর বসবাসরত সকল প্রাণীর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকা কোনক্রমেই বিঘ্নিত না হয়।
ড. ইউনূস, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের অমর একুশে নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের আত্মপরিচয়ের অবিনাশী স্মারক। আমাদের স্বাধিকার চেতনার প্রাণপ্রবাহ। ১৯৫২ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রসমাজ। ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধিকার চেতনার এক অবিশ্বাস্য জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব যাঁরা আজ একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন তাঁদের দেশবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনাদের অবদানের জন্য জাতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আপনারা জাতির পথ প্রদর্শক। আপনাদের অবদানে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি দৃঢ় বিশ্বাসে জাতিপুঞ্জের মজলিসে ক্রমাগতভাবে উন্নততর অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।
এ বছর পদকের জন্য মনোনীতরা হলেন— চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) ও ফেরদৌস আরা, গবেষণায় মঈদুল হাসান, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন ও চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা, সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লাহ (মরণোত্তর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহদী হাসান খান (দলনেতা), রিফাত নবী (দলগত), মো. তানবিন ইসলাম সিয়াম (দলগত) ও শাবাব মুস্তাফা (দলগত)।
এছাড়া, সমাজসেবায় পদক পাচ্ছেন মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে মাহমুদুর রহমান, ভাষা ও সাহিত্যে হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) ও শহীদুল জহির (মো. শহিদুল হক) (মরণোত্তর), সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ড. শহিদুল আলম এবং ক্রীড়ায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে চালু করা একুশে পদক সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিয়ে থাকে।
দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, ভাষাসৈনিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখা ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।