ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে সকাল থেকেই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার ঢল নামে। শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মানুষের স্রোত মুখর করে তোলে উদ্যান ও আশপাশের এলাকাগুলো।
সকাল ১০টার দিক থেকেই রাজধানীর কাওরান বাজার, বাংলামটর ও শাহবাগ এলাকার সড়কে দেখা যায় ট্রাক, পিকআপ ও পায়ে হেঁটে আসা হাজারো মানুষ। সবার হাতেই ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ লেখা ব্যানার, আর কণ্ঠে ছিল প্রতিবাদী স্লোগান—‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ইসরায়েল নিপাত যাক’। জায়গার অভাবে অনেকেই উদ্যানে ঢুকতে না পেরে অবস্থান নিয়েছেন আশপাশের রাস্তায়।
মিরপুর থেকে আসা চাকরিজীবী মহিউদ্দিন মাহির জানান, “দুপুর দেড়টার দিকে গাড়িতে রওনা দিই, কিন্তু কাওরান বাজারেই গাড়ি থেমে যায়। এত মানুষের ভিড় যে পায়ে হেঁটেই যেতে হচ্ছে।”
অন্যদিকে শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে আসা কলেজছাত্র সোহাগ খান বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকেই গাজার যুদ্ধ দেখছি। চাই বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হোক। ফিলিস্তিনের শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা বুক পেতে দিতে রাজি।”
উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন ফটকে পতাকা বিক্রি করছিলেন তরুণ নাজমুল হোসাইন। বললেন, “আমি শুধু বিক্রি করতে আসিনি। এসেছি এই বার্তা দিতে—আমরা নির্যাতনের বিরুদ্ধে। মুসলমানরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় একসাথে থাকে।”
উত্তরা থেকে বন্ধুদের নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা তরুণ সাইদুর রহমান বলেন, “প্রতিদিন গাজায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহতা আমরা দেখি। সরাসরি কিছু না করতে পারলেও অন্তত সংহতির বার্তাটি দিতে চাই। তাই এসেছি।”
সরেজমিনে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব প্রান্তে খোলা মঞ্চ, তার সামনে লাল গালিচা ও শতাধিক চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে অতিথিদের জন্য। নিরাপত্তার জন্য চারপাশ ঘেরা হয়েছে বাঁশের বেষ্টনী দিয়ে। শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জুড়ে মাইক লাগানো হয়েছে যাতে সবাই বক্তব্য শুনতে পারেন। মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও।
ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে এক হয়েছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ আরও অনেক দলের নেতাকর্মী এই মঞ্চে এসে দাঁড়ান একই কাতারে।
আয়োজকরা জানান, এ কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়েছেন বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াঙ্গন ও মিডিয়ার পরিচিত মুখরাও। ইসলামি চিন্তাবিদ ড. মিজানুর রহমান আজহারী থেকে শুরু করে ক্রীড়াবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সরব সমর্থন জানান।
বার্তা স্পষ্ট—মানবতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাজার নিরস্ত্র মানুষের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়াই ছিল এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।