এই প্রতিবেদনে বর্ণিত ঘটনা বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সহিংসতার এক নৃশংস অধ্যায় তুলে ধরেছে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আন্দোলনকারীদের উপর সহিংস দমন-পীড়ন চালানো হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (OHCHR) সম্প্রতি এই ঘটনার ওপর একটি তদন্ত প্রতিবেদনপ্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক সহিংসতার শীর্ষ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন।
সহিংস দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সারা দেশে সহিংস বিক্ষোভ দমন করার নামে প্রায় ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই নিরাপত্তা বাহিনীর শটগানের গুলিতে নিহত হন। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয় এবং অনেকেই পঙ্গু হয়ে যায়। ১১,৭০০-এর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীযৌথভাবে এই সহিংসতা পরিচালনা করেছিল।
শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সহিংসতা
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার, হত্যা এবং তাদের মরদেহ লুকানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সাবেক সরকার ও তার নিরাপত্তা বাহিনী সমন্বিতভাবে অত্যন্ত নৃশংসভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকরেছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন অনুসারে, রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই দমন-পীড়ন ঘটেছিল, যেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি নেতৃত্ব দেন।
বিশেষ নির্দেশনা ও মেজর সহিংসতা
১৮ জুলাই এবং ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিজিবি ও র্যাব-কে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়, যার ফলে সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করে। ১৯ জুলাই, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে এবং তাদের মরদেহ লুকিয়ে ফেলতে। এই নির্দেশনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক বলে জাতিসংঘ মন্তব্য করেছে।
বিস্ফোরক প্রতিবেদন
জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য একটি শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন অকাট্য প্রমাণ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আসবে এবং এটি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শক্তিশালী হাতিয়ার হবে।
মধ্যস্থতাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতা
প্রতিবেদনটি আরও বলছে যে, আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠী ও নিরাপত্তা বাহিনী যৌথভাবে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় সহিংসতার অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অভিযুক্ত বাহিনী নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার এবং নির্বিচারে হত্যার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন চালিয়ে গেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পরবর্তী পদক্ষেপ
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে এটি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শীর্ষে ছিল। জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের মতে, এই ধরনের সহিংসতা অপরাধমূলক এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
এই প্রতিবেদনে যেসব ঘটনার কথা উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক আদালত যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং সেগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।