গাজায় চলমান যুদ্ধ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে হাজারো শিশুদের। তাদের শৈশব কেড়ে নিয়েছে ধ্বংসস্তূপ, অনাহার, এবং প্রিয়জনদের হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণা। আমরা তিনজন শিশুর জীবন অনুসরণ করেছি, যারা প্রতিদিন এই যুদ্ধের মাঝে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। তাদের গল্প গাজার বাস্তবতা এবং মানবিক সংকটের গভীর চিত্র তুলে ধরে।
ইয়াসিন: ধ্বংসস্তূপের মাঝে নতুন জীবনের সন্ধান
১২ বছর বয়সী ইয়াসিন একসময় স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু এখন তার জীবন কেবল বেঁচে থাকার সংগ্রামে সীমাবদ্ধ। ইসরায়েলি হামলায় তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, বাবা-মাও হারিয়ে গেছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। এখন সে একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে খাবার আর পানির সংকট প্রতিনিয়ত তাকে কষ্ট দিচ্ছে।
“আমি শুধু আবার স্কুলে যেতে চাই,” বলল ইয়াসিন, “কিন্তু আমার বইপত্র সব ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার বন্ধুদের অনেকেই মারা গেছে। যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হবে কিনা জানি না, তবে আমি শুধু স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চাই।”
আমাল: একজন ছোট্ট মেয়ের ভয় আর প্রতিদিনের লড়াই
১০ বছর বয়সী আমাল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাতে ঘুমাতে পারে না। প্রতিটি বোমার শব্দে সে চমকে ওঠে। তার পরিবার একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের নিচের অংশে আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে খাবারের অভাব এবং চিকিৎসার সংকট তাদের প্রতিটি মুহূর্তকে কঠিন করে তুলেছে।
“আমি মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমরা কি আর কখনো আমাদের পুরনো বাড়িতে ফিরতে পারব?” আমাল বলল, “তিনি শুধু কাঁদছিলেন। আমি জানি না আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।”
তার ছোট ভাই মারওয়ান অপুষ্টিতে ভুগছে, কারণ দিনের পর দিন পর্যাপ্ত খাবার জোগাড় করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ওমর: যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
১৫ বছর বয়সী ওমর তার পরিবারের একমাত্র রুটি-রুজির আশ্রয়। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তার বাবা নিখোঁজ, আর মা তাকে এবং তার ছোট ভাই-বোনদের খাওয়ানোর জন্য সংগ্রাম করছেন। একসময় যে কিশোর ফুটবল খেলা ভালোবাসত, এখন সে প্রতিদিন আশ্রয় শিবিরে খাবারের জন্য লাইন ধরে দাঁড়ায়।
“আমি কাজ খুঁজতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখানে তো কাজ নেই। দোকানপাট ধ্বংস হয়ে গেছে, স্কুল বন্ধ, হাসপাতাল কাজ করছে না।”
ওমর জানে না তার ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তবে সে স্বপ্ন দেখে যুদ্ধ শেষ হবে এবং তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে।
গাজার শিশুদের জন্য ভবিষ্যৎ কী?
গাজার এই তিনটি শিশু হাজারো যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুর প্রতিচ্ছবি। তারা প্রতিদিন অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে, যেখানে খাদ্য, আশ্রয় এবং নিরাপত্তার অভাব তাদের বেড়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজার শিশুদের জন্য জরুরি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তি চুক্তি ছাড়া এই শিশুদের দুর্ভোগের শেষ কোথায়, তা এখনো অনিশ্চিত।
যুদ্ধ কেবল ভবন ধ্বংস করে না, এটি একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎকেও ধ্বংস করে দেয়। ইয়াসিন, আমাল, ওমরের মতো আরও হাজারো শিশু অপেক্ষায় আছে—একটি নতুন দিনের, যেখানে তারা আবার স্কুলে যাবে, খেলবে, এবং স্বপ্ন দেখতে পারবে। কিন্তু সেই দিন কবে আসবে, কেউ জানে না।