হাওয়াইয়ের কিলাউয়া আগ্নেয়গিরি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এটি তার ১০তম উদগিরণ শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা আগ্নেয়গিরিটির ক্রমাগত পরিবর্তনশীল আচরণ পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সতর্কতা জারি করেছেন। এই অগ্ন্যুৎপাত বিশ্বব্যাপী আগ্নেয়গিরি গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, কারণ কিলাউয়া বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হিসেবে পরিচিত।
অগ্ন্যুৎপাতের বিবরণ ও বর্তমান পরিস্থিতি
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, কিলাউয়ার অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে এবং এর ফলে লাভার প্রবাহ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আগ্নেয়গিরির গর্ত থেকে উজ্জ্বল লাল-কমলা লাভার স্রোত বের হচ্ছে, যা রাতের অন্ধকারে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লাভার প্রবাহ বর্তমানে আগ্নেয়গিরির প্রধান গর্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, তবে এর বিস্তার বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
USGS-এর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে সালফার ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে, যা বায়ু দূষণের কারণ হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন এবং জরুরি পরিষেবাগুলো ইতোমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে এবং জনগণকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছে।
কিলাউয়ার ইতিহাস: এক বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরি
কিলাউয়া আগ্নেয়গিরি পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী এবং সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত এবং হাওয়াই দ্বীপের অন্যতম প্রধান ভূ-প্রাকৃতিক আকর্ষণ। বিগত কয়েক দশক ধরে এটি বেশ কয়েকবার অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছে।
- ২০১৮ সালের অগ্ন্যুৎপাত: কিলাউয়ার ইতিহাসে অন্যতম বড় অগ্ন্যুৎপাতের একটি ছিল ২০১৮ সালে। সে সময় দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে লাভা উদগিরণ চলতে থাকে, যার ফলে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয় এবং হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়।
- ২০২৩ সালের অগ্ন্যুৎপাত: সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন ও সেপ্টেম্বর মাসে কিলাউয়া অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছিল। তবে সেগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং আশেপাশের পরিবেশের ওপর তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব ফেলেছিল।
অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাব: পরিবেশ ও জনজীবন
এই ধরনের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত স্থানীয় জনগণের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।
- বায়ু দূষণ: লাভা উদগিরণের ফলে বায়ুমণ্ডলে সালফার ডাই অক্সাইডসহ অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- আশপাশের এলাকার বিপদ: লাভার প্রবাহ যদি বিস্তৃত হয়, তবে এটি বসতি, রাস্তাঘাট এবং কৃষিজমির ক্ষতি করতে পারে।
- ভূমিকম্পের আশঙ্কা: আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তার কারণে আশপাশে ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে, যা জনজীবনে অতিরিক্ত আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিলাউয়ার বর্তমান অগ্ন্যুৎপাত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তবে পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে লাভার প্রবাহের দিক ও তীব্রতা। USGS এবং স্থানীয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক আগ্নেয়গিরির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে এবং যেকোনো জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
হাওয়াই প্রশাসন স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে এবং অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
কিলাউয়া আগ্নেয়গিরির এই অগ্ন্যুৎপাত বৈশ্বিক আগ্নেয়গিরি গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সঙ্গে স্থানীয় জনগণের জন্য উদ্বেগের কারণ। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, সতর্কতা এবং যথাযথ প্রস্তুতির মাধ্যমে এই দুর্যোগের ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে কিলাউয়ার ইতিহাস বলে, এটি কখনও কখনও দীর্ঘস্থায়ী এবং ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাই পরিস্থিতি খুব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
4o