নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ব্যবসা এখন গভীর সংকটে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে একের পর এক নেতার দেশত্যাগ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন করে তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে।
দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করা ওসমান পরিবারের দুই সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান দেশ ছাড়লেও, এখন বিদেশ থেকে নিজেদের গার্মেন্টস, পরিবহন ও আবাসন ব্যবসার জন্য নতুন অংশীদার খুঁজছেন। তাদের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের আরেক সাবেক প্রভাবশালী নেতা গোলাম দস্তগীর গাজী বর্তমানে কারাগারে। তার মালিকানাধীন গাজী টায়ারসহ একাধিক কারখানা অভ্যুত্থানের সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয়, কিছু বন্ধ রয়েছে। এখন তার পরিবার ব্যবসা পুনরায় চালু করতে অংশীদার খুঁজছে, যদিও স্থানীয় রাজনৈতিক বিভাজন এ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে।
শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, কুমিল্লা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাবেক মন্ত্রী-এমপিরাও একই সংকটে রয়েছেন। কুমিল্লা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাফর মো. শফিউদ্দিন শামীম, রাজশাহীর শাহরিয়ার আলম, চট্টগ্রামের হাছান মাহমুদ, তাজুল ইসলাম, ও মাহবুব-উল আলম হানিফ—এদের প্রত্যেকেই এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নতুন অংশীদার খুঁজছেন।
বিশেষ করে যেসব নেতারা জাতীয় পর্যায়ে বিশাল শিল্পগোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন বিএনপি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপনে অংশীদারিত্ব স্থাপনের চেষ্টা করছেন। এমনকি, অনেকে বিদেশে পাড়ি দিয়ে সেখান থেকেও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের হলফনামায় ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ দেখানো হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলের পর তাদের অনেকের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো শ্রমিক।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, “বিনিয়োগকারীদের এখন মহাসংকট চলছে। কেউ কেউ দেশ থেকে সম্পদ পাচার করছেন, আবার কেউ নতুন অংশীদার খুঁজছেন যাতে ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখা যায়।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জগতে বড় রকমের পুনর্বিন্যাস চলছে। এতে ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা একচেটিয়া ব্যবসার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।