রাশিয়া বুধবার ভূমি, সমুদ্র ও আকাশপথে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থার সক্ষমতা পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে—যেটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের সম্ভাব্য বৈঠক বাতিল হয়ে গেছে।
পরীক্ষার অংশ হিসেবে রাশিয়া একটি ভূমি-ভিত্তিক “ইয়ার্স” আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং পারমাণবিক সক্ষমতা-সম্পন্ন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে তাদের কৌশলগত বোমারু বিমান থেকে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার রাশিয়ার হাতে, এবং এই পরীক্ষা পশ্চিম ইউরোপ ও ন্যাটোর সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
একটি “Yars” আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ,
কৌশলগত বোমারু বিমান থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ,
পরমাণু সাবমেরিন থেকে “Bulava” ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া।
পুতিন নিজে এই মহড়ার তত্ত্বাবধান করেন এবং বলেন,
“ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বাইরের হুমকি বেড়ে যাওয়ায়, আমাদের কৌশলগত বাহিনীকে সবসময় প্রস্তুত ও আধুনিক রাখতে হবে।”
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এই মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল —
“শত্রুর পারমাণবিক হামলার জবাবে বড় পরিসরে পাল্টা পারমাণবিক হামলার অনুশীলন।”
পরমাণু নীতির পরিবর্তন
রাশিয়া তাদের পরমাণু যুদ্ধনীতি পরিবর্তন করেছে:
এখন বলা হচ্ছে, কোনো মিত্র পারমাণবিক শক্তির সমর্থনে রাশিয়ার ওপর প্রচলিত (conventional) হামলা চালালেও, সেটি পারমাণবিক হামলা বলে গণ্য হতে পারে — অর্থাৎ জবাবে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
এই পরিবর্তন পশ্চিমা অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের রাশিয়ার ভেতর আক্রমণের অনুমতি দেওয়ার পরপরই এসেছে।
নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার ব্যবহার
রাশিয়া একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছে —
একটি মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার নাম “Oreshnik” (বা “Oréshnik”)।
এটি বহু ওয়ারহেড বহনে সক্ষম, এবং পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নেটো (NATO) বলেছে, রাশিয়া ইউক্রেনকে “পরীক্ষার ময়দান” হিসেবে ব্যবহার করছে নতুন অস্ত্র সিস্টেমের জন্য।
নেটো ও ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
নেটো-ইউক্রেন কাউন্সিল রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ডকে নাগরিকদের সন্ত্রস্ত করা ও পশ্চিমা মিত্রদের ভয় দেখানোর চেষ্টা বলে নিন্দা জানিয়েছে।
ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা বলছে, রাশিয়ার এই পারমাণবিক হুমকি কেবল আঞ্চলিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।
এর গুরুত্ব কী?
উচ্চ মাত্রার উত্তেজনা: যুদ্ধ এখন আর কেবল প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে সীমাবদ্ধ নেই, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি প্রকাশ্যে দেওয়া হচ্ছে।
ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা বাড়ছে: যদি কোনো পক্ষ ভুল করে পরিস্থিতিকে ‘পারমাণবিক হামলা’ হিসেবে বিবেচনা করে, তাহলে বিপজ্জনক পাল্টা হামলা ঘটতে পারে।
কূটনৈতিক চাপ: রাশিয়া হয়তো এই হুমকি ব্যবহার করছে পশ্চিমকে আলোচনায় বসাতে বা ইউক্রেনকে চাপ প্রয়োগে বাধ্য করতে।
আগামী দিনগুলোতে কী নজরে রাখা উচিত?
রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা বা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করে কি না — এটাই এখন সবচেয়ে বড় আশঙ্কার জায়গা।
ইউক্রেনের মিত্ররা আরও দূরপাল্লার অস্ত্র অনুমোদন দিলে, রাশিয়া এর জবাবে আরও কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে।
নেটো নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করে কি না, বা তাদের প্রতিক্রিয়া আরও শক্ত হয় কি না — সেটাও নির্ধারণ করবে উত্তেজনা কোথায় গিয়ে ঠেকে।
পুতিন ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠক বা বাতিল হওয়া আলোচনা পারমাণবিক হুমকি বন্ধে কোনো সমাধান আনতে পারে কি না — সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।