নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক মাঠে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি ও তৎপরতা। নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানরা কোন আসন থেকে লড়বেন, তা নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে প্রবল আগ্রহ ও কৌতূহল।
১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান
২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের সময়কার জরুরি সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবার তিনি দেশে ফিরছেন এবং জীবনে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলীয় ও জোটগত প্রার্থী বাছাই এবং আসন ভাগাভাগির আলোচনার পাশাপাশি তারেক রহমান নিজেও তার প্রার্থীতা নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করছেন।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তিনি তিনটি আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। এই তিনটি আসন হতে পারে:
- বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর): তারেক রহমানের পৈতৃক এলাকা।
- ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট-বনানী): তার জন্ম ও বেড়ে ওঠার স্মৃতিবিজড়িত এলাকা।
- সিলেট-১: রাজনৈতিকভাবে ‘সরকার গঠনের ইঙ্গিতবাহী’ আসন হিসেবে পরিচিত। এটি তার শ্বশুরবাড়ির এলাকা।
খালেদা জিয়া কি লড়বেন?
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থীতা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দলীয়ভাবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তাকে ফেনী-১ বা ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রার্থী করা হতে পারে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “ম্যাডাম নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, তা একান্তই তাঁর সিদ্ধান্ত। আমরা সবাই তাঁর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”
জিয়া পরিবার থেকে আরও প্রার্থী
সূত্র জানায়, জিয়া পরিবার থেকে এবার পাঁচটি আসনে প্রার্থীতা হতে পারে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়াও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান প্রার্থী হতে পারেন। তবে ডা. জোবাইদা রহমান ও ব্যারিস্টার জাইমা রহমান রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন এবং নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, সদস্যরা লড়বেন স্বতন্ত্র হিসেবে?
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম ও নিবন্ধন স্থগিত থাকায় দলটি সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তবে দলটির অনেক নির্দোষ সদস্য ও জনপ্রিয় নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নতুন ও বিকল্প শক্তিগুলো কী করছে?
বিগত এক বছরে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের মাঠপর্যায়ের সক্রিয়তা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় এসেছে। তাঁর দলও কিছু আসনে সরাসরি প্রার্থী দিতে পারে বলে জানা গেছে, যদিও শেষ মুহূর্তে আসন ভাগাভাগিতে পরিবর্তন হতে পারে।
এছাড়া তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম–এর প্রার্থীতা নিয়েও আগ্রহ রয়েছে। তাঁর নতুন দলটি তরুণ ভোটারদের মধ্যে একটি ‘প্রত্যাশার বিকল্প’ হিসেবে কাজ করছে।
জোট ও সমঝোতার নির্বাচন হতে পারে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই জোটভিত্তিক বা আসনভিত্তিক সমঝোতার প্রবণতা বাড়বে। বিএনপি ইতোমধ্যে কিছু ইসলামী দল ও মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে।