আমি সবসময় দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী থাকার চেষ্টা করি। তবে কিছু বিষয় মনকে দুঃখ দেয়, ভাবায়। এখন বাংলাদেশের সমাজে যেন এক ধরনের ‘মব সংস্কৃতি’র উত্থান দেখা যাচ্ছে—যা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন করে চিনতে বাধ্য করছে।
এ বছরের পহেলা বৈশাখ বিগত বছরের চেয়ে অনেকটাই আলাদা মনে হচ্ছে। প্রতিবছর ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে যে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ আয়োজিত হত, তা ছিল উৎসবের প্রতীক, বাঙালির ঐক্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের ভাষা। কিন্তু এ বছর সেই পরিচিত নাম বদলে হয়ে গেছে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। এই নামবদলের পেছনে রাজনৈতিক ইঙ্গিত স্পষ্ট—যদিও প্রতীকমূলক রূপে হলেও বিষয়টি মন খারাপ করে দেয়।
নাম বদলের চেয়ে বড় যেটা ভাবায়, সেটা হলো এই আয়োজন এখন আর শুধুমাত্র ছাত্রদের নিজস্ব উদ্যোগে সীমাবদ্ধ নেই—সরকারি হস্তক্ষেপ স্পষ্ট। আর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উদযাপনে যদি রাজনৈতিক ছায়া পড়ে, তাহলে সেখানে সাধারণ মানুষের সেই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ভাটা পড়তে বাধ্য। প্রতিবছর যেভাবে মানুষ উন্মুক্ত হৃদয়ে অংশ নিত, এ বছর সেই উন্মাদনা আর থাকবে কি না, জানি না। আমি হয়তো সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারি না, কিন্তু টেলিভিশনে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে চোখ রাখি। এবারও দেখব, তবে জানি না—যেটা দেখব সেটা সত্যিই আগের মতো প্রাণবন্ত হবে কি না!
আমি নিজেও একজন শিল্পী। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দিক তাকালে একটা অনিশ্চয়তা আর সংশয়ের মেঘ দেখি। যারা একসময় সত্যের কথা বলতেন, সাহস করে প্রতিবাদে দাঁড়াতেন, আজ তাদের অনেকেই নীরব। এই অবস্থাটা একজন সচেতন নাগরিক ও সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ হিসেবে সত্যিই কষ্টের।