নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ ৩০ মে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্যের গুলিতে নিহত হন তিনি। শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, ওই দুই দিনের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ভয়াবহ মোড় নেয়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ২৯ মে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন দলীয় কোন্দল মেটাতে। সেখানকার দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাতটি তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কাটান। ভোররাতে শুরু হয় গুলির শব্দ।
চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী তাঁর লেখা বইয়ে উল্লেখ করেছেন, “ভোর চারটার দিকে সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি গুলি করতে করতে সার্কিট হাউসে ঢুকে পড়ে। কয়েকজন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে প্রেসিডেন্টের কক্ষে যায়। কিছুক্ষণ পরই গুলির শব্দ থেমে যায়।”
পরদিন সকালে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সার্কিট হাউসে গিয়ে দেখেন, প্রেসিডেন্টের রুমের দরজার সামনে পড়ে আছে সাদা কাপড়ে মোড়ানো মৃতদেহ। পরে সেটিই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দেহ বলে নিশ্চিত করা হয়। মুখমণ্ডলের একাংশ ছিল ক্ষতবিক্ষত।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা মেজর রেজাউল করিম রেজা জানান, তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ পাহাড়ে নিয়ে কবর দিতে। তিনি বলেন, “আমি জেনারেল মঞ্জুরকে অনুরোধ করি আমাকে এই দায়িত্ব না দিতে। পরে মেজর শওকত আলীর নেতৃত্বে তিনটি মৃতদেহ—জিয়া, কর্নেল এহসান ও ক্যাপ্টেন হাফিজ—একটি পিকআপে তোলা হয় এবং পাহাড়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।”
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট তখন ছিল যুদ্ধাবস্থা সদৃশ। সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তাকে তড়িঘড়ি করে ডেকে এনে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই অভ্যুত্থানে জড়িত বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যা বা গ্রেপ্তার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মতোই জিয়া হত্যাকাণ্ডও এখনো ঘনীভূত ঐতিহাসিক বিতর্কে ঢাকা। রাজনৈতিক মহলে মতভেদ থাকলেও, ইতিহাস বলে—১৯৮১ সালের ৩০ মে ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক বেদনার কালরাত্রি।