বাংলা এফএম ডেস্ক:
জুলাই অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় ১০ মাস পর মুখ খুললেন নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উত্তাল সেই সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এই প্রবীণ রাজনীতিক।
৭৩ বছর বয়সী এই নেতা জানান, গণ-অভ্যুত্থানের দিন তিনি স্ত্রীসহ এক পরিচিতের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে হামলা শুরু হলে, বাধ্য হয়ে তিনি প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন।
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দীর্ঘ সময় পর্দার আড়ালে থাকার পর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খোলামেলা কথা বলেছেন। দল, নেতৃত্ব, নিজের ভূমিকা এবং অভ্যুত্থানের সময়কার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তিনি।
অভ্যুত্থানের দিন বেঁচে ফিরেছিলেন পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে
ওবায়দুল কাদের জানান, গণঅভ্যুত্থানের দিন তিনি ও তাঁর স্ত্রী এক পরিচিতের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও হামলা শুরু হলে তারা বাধ্য হয়ে বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নেন।
“পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম। যারা হামলা করেছিল, তারা আমাকে চিনে ফেলে। কেউ তুলে দিতে চায় সেনা বা জনতার হাতে, কেউ আবার সেলফি তোলে। শেষ পর্যন্ত আমাকে মাস্ক পরিয়ে, পোশাক বদলে এক জায়গায় ছেড়ে দেয়।”
অভ্যুত্থান দমনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, “আমি কখনো ছাত্রলীগ বা যুবলীগকে অভ্যুত্থান দমন করতে বলিনি। আমার কোনো ভাষণে ছাত্রলীগ শব্দটিও নেই। তবে পার্টি অফিসে বারবার হামলা হচ্ছিল, আমি কি চুপ করে থাকব? পার্টিকে, নেত্রীকে রক্ষা করাও আমার দায়িত্ব।”
ব্যর্থতার দায় স্বীকার, তবে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি নেত্রীর নির্দেশ মতো কাজ করেছি। ভুল ত্রুটি আমার থাকতে পারে। আই অ্যাম নট ইমিউনড ফ্রম মিসটেকস। তবে আমি কমিশন নিইনি, পদ বিক্রি করিনি। চাঁদাবাজিও করিনি। এ বিষয়ে আমি নিজেকে নির্দোষ বলতে পারি।”
আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল কোটা সংস্কার থেকে, যা পরে রূপ নেয় একদফা দাবিতে। গোয়েন্দা ব্যর্থতাই অভ্যুত্থানের মূল কারণ ছিলো বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “এটা একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল। ইন্টেলিজেন্স ব্যর্থ হয়েছে, এটা স্বীকার করতে হবে।”
নীরব থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাকে চুপ থাকতে বলা হয়েছিল। এটা যদি শাস্তি হয়, হোক। নেত্রী তিনবার আমাকে সাধারণ সম্পাদক করেছেন। সেটা অনেকের পছন্দ হয়নি। আমি নেত্রীর নির্দেশেই নীরব ছিলাম, এখন তিনি বলেছেন সক্রিয় হতে।”
আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের দিক নিয়েও কথা বলেন। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দলীয় কোন্দল সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এটা অসুস্থ রাজনীতি। দেশের বাইরে বসে নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই করা ঠিক না। আগে দেশে ফিরে দেশের কথা ভাবতে হবে।”
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি আশাবাদী যে দল আবার ঘুরে দাঁড়াবে। “জনমত সমীক্ষা বলছে, এখনো অনেকে শেখ হাসিনাকেই সেরা মনে করেন। আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াব, ইনশাআল্লাহ।”
আওয়ামী লিগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা নিয়ে ভারত সরকার ছাড়া আর কোনো দেশ প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তাহলে আওয়ামী লীগ কি একঘরে হয়ে আছে?
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মোটেই না। আমরা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে কোনো দেশ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে চাই না।’
সবশেষে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করে এই নেতা বলেন, ‘ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে সেটা দেশে ফিরে বলব। ভারতে বসে বলব কেন? আমার, আমাদের ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে সেটা বলার জন্য আমাদের নেত্রী আছেন। তিনিই দেশে ফিরে দেশবাসীকে বলবেন। এখান থেকে বলা কি ঠিক?’
সূত্র: দ্য ওয়াল