জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপে অংশ নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়ায় বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সোমবার (২ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এ বৈঠকে মূলত সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার কথা থাকলেও অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় নির্বাচন ডিসেম্বরেই হবে নাকি আগামী বছর তা ঘিরে তর্কে। বৈঠকে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং এনসিপির নেতৃত্বে ছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সকল রাজনৈতিক দলকে স্বাগত জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এবং কমিশনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার আহ্বান জানান। এরপর বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হলে তা সংবিধান ও জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী হবে। তিনি দাবি করেন, প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার এক মাসেই শেষ করা সম্ভব এবং এক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন ছাড়া অন্য সব পদক্ষেপ নির্বাহী আদেশেই বাস্তবায়ন করা যাবে।
এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম পাল্টা বক্তব্যে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল ভারতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ডিসেম্বরেই নির্বাচন করতে চায়, যা সংস্কার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন চাওয়া মানেই যদি ভারতের সুরে কথা বলা হয়, তাহলে নির্বাচন পেছাতে চাওয়া মানে কি যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের সুরে কথা বলা? এ বক্তব্যের পরপরই বৈঠকে তীব্র তর্ক-বিতর্ক শুরু হয় বলে জানান উপস্থিত অন্তত ছয়জন অংশগ্রহণকারী।
এক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা বলেন, আলোচনা হওয়ার কথা ছিল সংস্কার নিয়ে, কিন্তু তা রূপ নেয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে তর্কে। অনেক ছোট দল নিজেদের মত না জানিয়ে শুধু বিএনপির অবস্থান সমর্থন করতেই বৈঠকে এসেছে। তারা দেশের সার্বিক স্বার্থ নিয়ে ভাবছে না, বরং নির্বাচন কবে হবে তা নিয়েই ব্যস্ত।
বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব এবং এটি বাস্তবায়নে এক মাস যথেষ্ট। তিনি নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। অন্যদিকে, এনসিপি নেতা নাহিদ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আগে নির্বাচন ঘোষণা উচিত নয়, কারণ আগেভাগে তারিখ ঘোষণা করলে প্রয়োজনীয় সংস্কার ব্যাহত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা ১৬ বছর অপেক্ষা করেছি, আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে পারি—কিন্তু চাই যেন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হয়।
নাহিদ জানান, এনসিপি নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন সংস্কার এবং কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপি ও এনসিপির এই মুখোমুখি অবস্থানই বোঝায়, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ ও উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।