বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের প্রতি আন্তরিক নয়। বরং তারা নানা কথা বলে একটি “মুলা ঝুলিয়ে রাখার” রাজনীতি করছে। রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকাস্থ নীলফামারী জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরাম, সাবেক এমপি প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিনের মুক্তির দাবিতে।
রিজভী বলেন, সরকার কখনো ডিসেম্বরে, কখনো ফেব্রুয়ারিতে আবার কখনো জুনে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলছে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কেউ বলছে না, কবে হবে নির্বাচন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, দোসরদের দিয়ে সরকারকে বিএনপিবিরোধী অবস্থানে নেওয়া হচ্ছে। এই দোসররাই নানা ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত, যারা চায় না দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকের এই অনিশ্চয়তা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার চেতনাকে ক্ষয়িষ্ণু করে তুলছে। তিনি উল্লেখ করেন, একাত্তরের সংগ্রাম এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের জাতীয় ঐক্যের প্রেক্ষাপট যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়েছিল, সেটাই এখন চাপে রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার “মানবিক করিডোর” প্রসঙ্গে ধোঁয়াশাপূর্ণ কথা বলছে, কারণ তাদের নেই জনগণের ভোট ও ম্যান্ডেট। তাই তারা লুকিয়ে থেকে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
রিজভী আরও বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলো সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু সেই সমর্থনের যথাযথ প্রতিফলন না থাকায় আজ সরকার জনগণের চোখে অবিশ্বাসের জায়গায় চলে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার এখন কানামাছি খেলার মতো আচরণ করছে—একবার বলে এক কথা, আরেকবার বলে আরেক কথা। এতে তাদের ওপর বিশ্বাস দুর্বল হচ্ছে।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বৈরিতা নেই, তবুও কেন তারা বাংলাদেশকে পাশ কাটিয়ে অন্য পথে পণ্য পাঠানোর চেষ্টা করছে? দিল্লির এমন একতরফা আচরণের পরও অন্তর্বর্তী সরকার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। অথচ ভারতের সড়ক ও নৌপথ ব্যবহার করেই তারা সুবিধা নিচ্ছে। এই নীরবতা জনগণের কাছে প্রশ্ন তুলছে—এটা কি কূটনৈতিক দুর্বলতা, না অন্য কোনো চাপের ফল?
রিজভী বলেন, প্রশাসনের ভেতরে এখনো সেই আওয়ামী ভাবাদর্শের লোকজন ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা রঙ বদল করে, নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে এবং নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে। তিনি বিচারপতি আখতারুজ্জামানকে উদাহরণ টেনে বলেন, যিনি বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছেন, তিনি আজও বিচারপতির পদে বহাল—যা বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের জাহিদুল কবির, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত ও ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আউয়াল প্রমুখ।