সিলেট ব্যুরো:
– বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে ডাকে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সকাল ১০ ঘটিকায় এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে সারাদেশের ন্যায় সিলেট মহানগর আওতাধীন বিএনপি সমর্থক সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলদের উপস্থিত থাকার জন্য আহবান জানানো হয়।
উক্ত সমাবেশে পতিত আওয়ামিলীগের আমলে ছাত্র জনতার উপর হামলার হুকুমদাতা, হামলাকারি, বেশ কয়েকটি মামলার আসামী, সিলেট সিটির সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামিলীগ নেতা শওকত আমিন তৌহিদের উপস্হিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

নেটিজেনরা সমাবেশে তৌহিদের উপস্হিতি নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। সেই সাথে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা আরেক সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিনকে নিয়েও মন্তব্যের ঝড় তুলছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয় এই দাবিতে ঢাকায় দেখা মিলেছে সিলেটের সাবেক কয়েকজন জনপ্রতিনিধির। এর মধ্যে বিতর্কিত সেই শওকত আমিন তৌহিদকে দেখা গেছে সিলেট বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে! এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা ধরনের গুঞ্জন, ভাসছে আওয়ামিলীগ নেতা তৌহিদের বিভিন্ন অনুষ্টানের চিত্র। ইতিমধ্যে তৌহিদের একটা ভিডিও দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সে ভিডিও সুত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে সিলেট নগরীর মিরাবাজারে বিএনপির এক বৈঠক চলাকালে সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামিলীগ নেতা শওকত আমিন তৌহিদ পুলিশ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের সাথে নিয়ে সে বৈঠক বন্ধ করে দেন। এসময় তিনি বলেন তাদের অফিসে গিয়ে রাজনীতি চর্চা করুক আমার এলাকায় এসব হবেনা।

অথচ এই তৌহিদ পতিত আওয়ামিলীগের আমলে তার অফিসকে বানিয়েছিলেন আওয়ামিলীগের টর্চার সেল। সু্ত্র থেকে জানা যায়, রায়নগর এলাকার ভিতরে তার অফিস ছিল সবার মাঝে এক আতঙ্ক। অপরদিকে সিলেট নগরীর ২১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিনও এই সমাবেশে উপস্হিত ছিলেন। তবে তিনি বিএনপির কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নন। এক সময় তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন। কাউন্সিলর হওয়ার স্বপ্নে তিনি বিএনপির সকল ধরনের সংগঠন তথা রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করে বের হয়ে আসেন। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা। সেই সাথে অভিযোগ রয়েছে তিনি যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামিলীগের লোকজনদের মাধ্যমে ভোট কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তার বিগত সময়ে বিএনপির কোন প্রোগ্রামে তাকে দেখা যায়নি বরং উল্টো আওয়ামিলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার উপস্হিতি ছিল প্রশংসনীয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক কয়েকজন বিএনপি নেতা জানান, শওকত আমিন তৌহিদ আওয়ামিলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং গত জুলাই-আগষ্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারি হিসেবে মামলার আসামী। একথা জেনেও নেতৃবৃন্দ তাকে নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়া মানে জুলাই-আগষ্টের আন্দোলনে নিহত ও আহতদের রক্তের সাথে বেঈমানি। যেখানে শওকত আমিন তৌহিদ গ্রেফতার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সেখানে সিলেট বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে সমাবেশে যোগদান কিভাবে করে? বুধবার এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট দেয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
অপরদিকে তারা বলেন, আব্দুর রকিব তুহিন এক সময় বিএনপি করতেন, কিন্তু বিগত সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাকে দল থেকে নিষেধ দেয়ার পরও তিনি পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেন। এবং যুবলীগ ক্যাডার মেজরটিলার জাহাঙ্গীর ও টিলাগড়ের আজাদুর রহমান আজাদকে ম্যানেজ করে নির্বাচিত হন। একটি সুত্র বলছে তিনি ১৭ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। এরপরের ইতুহাস সবার জানা। তিনি আওয়ামিলীগের হয়ে কাজ করে গেছেন। তাকে বিগত ১৬ বছর বিএনপির কোন অনুষ্ঠাবে দেখা যায়নি তবে আওয়ানিলীগের বিভিন্ন ঘরোয়া মিটিংএ তাকে দেখা গেছে। বিশেষ করে টিলাগড় কেন্দ্রিক আওয়ামিলীগের নেতাদের হাত ছিল তার উপর।
এ ব্যাপারে সিসিকের সাবেক এক কাউন্সিলর বলেন, তৌহিদকে আমরা নিয়ে আসিনি, সে তার মত করে আসছে। আপনাদের সাথে তোলা ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হয়ত লুকিয়ে তুলেছে!
সাবেক জনপ্রতিনিধিদের এই কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জিকে গউছ, ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাবেক সিসিক কাউন্সিলর এবি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, হুমায়ুন কবির সুহিন, দেলোয়ার হোসেন নাদিম, নজমুল হোসেনসহ সিলেট সিটি কর্পোরেশন, বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক বিএনপি সমর্থিত সাবেক জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।