শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
জাতির দূর্বার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বিদায় হলেও দেশে ফ্যাসিবাদ এখনও রয়ে গেছে। তাই গণহত্যার বিচার ও প্রয়োজনীয় সংষ্কার ছাড়া নির্বাচন নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে নীলফামারীর জলঢাকায় এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন।
জলঢাকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত এই জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি এবং রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম। বক্তব্য রাখেন, টিম সদস্য আব্দুর রশিদ, জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, নায়েবে আমীর অধ্যাপক ড. খায়রুল আনাম, সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন জলঢাকা উপজেলা আমীর মাস্টার মোখলেছুর রহমান।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বহাল তবিয়তে। তাদের সিস্টেম বিদ্যমান থাকাবস্থায় নির্বাচন করা হলে জাতির ঘাড়ে আবারও ফ্যাসিস্টরা জেঁকে বসবে। যা জাতি কখনোই প্রত্যাশা করেনা। তাই নির্বাচন ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যথাযথ সংষ্কার এবং গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিস্টের সকল অপকর্মের বিচার করার আগে নির্বাচন করা যাবেনা।
তিনি আরও বলেন, হাসিনা সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে দেশকে শ্মশানে পরিণত করেছিল। অধিকারের কথা দূরের ব্যাপার স্বাভাবিক বাক স্বাধীনতাও কেড়ে নেয়া হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর উপর। আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রতিহিংসা বশত জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করেছে।
আওয়ামী লীগ কখনোই বাংলাদেশ ও এর জনগণকে ভালোবাসেনি। বরং বসন্তের কোকিলের মতো সময় সুযোগে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। তাইতো
ভারতের প্রেসক্রিপশনে ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ বিডিআর হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক, চৌকস ও সৎ সেনা কর্মকর্তাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। শাপলা চত্বর ঘটিয়েছে। সর্বশেষ চব্বিশের বিপ্লবে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে।
দেশ ও মানুষের প্রতি হাসিনার বিন্দুমাত্র দায় নেই। সেজন্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ লুট, খুন, গুম, চাঁদাবাজি, অর্থপাচার, দূর্নীতি করে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছিল। যে কারণে জনগণের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে পালিয়ে গেছে। অথচ আমাদের নেতারা নিশ্চিত ফাঁসি জেনেও দেশ ছেড়ে যাননি। নিষ্কলুষ মানুষগুলোকে নির্মমভাবে শেষ করে দিয়েছে। এখনও অনেকে কারান্তরিণ। জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের দ্রুত মুক্তি দাবী করছি।
আয়না ঘরের মত লোমহর্ষক অমানবিক নির্যাতনের হোতাদের দেশের মানুষ ঘৃণা করে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসী কোন নির্বাচন মেনে নিবেনা। আমরা আর কোন চাঁদাবাজের রাজত্ব দেখতে চাইনা। কোন পরনির্ভরশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রিয় মাতৃভূমিকে বিশ্বে পরিচিত করতে চাইনা। বরং আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের আলোকে গড়া একটা সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্র। সকলে মিলে সেই নতুন বাংলাদেশ গড়তে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যুবকরা তৈরী হও। আত্মপরিচয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো জাতি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার আন্দোলন, সংগ্রামে সামিল হতে। আমরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রথমেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির অনুকূল করে প্রতিষ্ঠিত করবো। যাতে কেউ সার্টিফিকেট নিয়ে বেকার না থাকে। নারীরাও তাদের যোগ্যতা, ইচ্ছার আলোকে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে নিজেদের স্থান করে নিতে পারবে।
আর সংখ্যা লঘু বলে কোন কথা থাকবেনা। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান সকলে এদেশের মর্যাদাবান নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার পাবে। কারো উপর কেউ কোন প্রকার অনধিকার চর্চা করতে পারবেনা। দেশ গড়ার কাজে সবাই অবদান রাখবে। এজন্য সবার প্রতি সহযোগিতার আহবান জানান তিনি।