সংবিধান সংশোধন নিয়ে চলমান সংলাপে ‘জুলাই ঘোষণা’ সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত করার প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি বলেছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা তারা ধারণ করে, তবে সেটিকে সংবিধানের মূল অংশে নয়, বরং চতুর্থ তপশিলে স্বীকৃতি দেওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ কথা জানান। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও সংবিধানের প্রস্তাবনায় ছিল না; তা স্বীকৃতি পেয়েছে তপশিলে। একইভাবে ‘জুলাই ঘোষণা’ রাষ্ট্রীয় আর্কাইভে থাকা উচিত, সংবিধানের মূল কাঠামোতে নয়।”
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দাবি করছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘোষিত রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত করা প্রয়োজন, কারণ এটিকে তারা ‘রাষ্ট্র পরিচালনার পাথেয়’ হিসেবে দেখছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিএনপি এই অভ্যুত্থানের গুরুত্ব, মর্যাদা ও মহিমা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে চায়। তবে তা করতে হবে ইতিহাস ও সংবিধানের চেতনার মধ্যে থেকেই।” তিনি আরও বলেন, ঘোষণা প্রস্তাবনায় নিলে প্রশ্ন উঠবে— ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কিংবা ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি কোথায় থাকবে?
বিএনপি চায়, সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে “জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪” যুক্ত হোক, পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের বিষয়টিও সেখানে উল্লেখ করা যাক।
এদিকে সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি প্রস্তাব করেছে— সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দু’জন বিচারপতির মধ্যে একজনকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। তবে অন্যান্য দল, বিশেষ করে জামায়াত ও এনসিপি, চায় জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিরাই সরাসরি প্রধান বিচারপতি হোন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে সংসদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের একটি নতুন প্রস্তাবও এসেছে কমিশনের পক্ষ থেকে। সব দলই এই ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছে, তবে চূড়ান্ত কাঠামো নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “বিভিন্ন মতামত আসছে, তবে ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়া এখনও সক্রিয় রয়েছে।”