মো: হাসান আলী, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি:
২০০৬ সালের ঐতিহাসিক রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর স্মরণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার উদ্যোগে দলের স্থানীয় কার্যালয়ে আজ (২৮ অক্টোবর, ২০২৫) বাদ মাগরিব এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা কবীর আহমদের সভাপতিত্বে এবং মাওলানা আফসার উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পৌর সভাপতি মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ, উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোঃ আফসার হোসেন, প্রচার সেক্রেটারি ডা. সরদার আবদুর রহিম ও টিম সদস্য মো: হানিফ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ভয়াবহ ও কলঙ্কজনক দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। সেদিন রাজধানীর পল্টনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা, লাঠি, আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা নিয়ে ভয়াবহ হামলা চালায়। প্রকাশ্য দিবালোকে নিরস্ত্র জামায়াত ও ছাত্রশিবির কর্মীদের পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং নির্মমভাবে লাশের ওপর নৃত্য-উল্লাসে মেতে ওঠে হামলাকারীরা। এই দৃশ্য পুরো জাতিকে হতবাক করে তোলে, বিশ্ববাসীকেও নাড়া দেয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রশিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম, কর্মী জসিম উদ্দিনসহ মোট ১৪ জন; আহত হন সহস্রাধিক নেতা-কর্মী।
বক্তারা আরও বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জাতির উদ্দেশে ভাষণের পর। পরদিন জামায়াতের সমাবেশের প্রস্তুতিকালে আওয়ামী জোটের নেতাকর্মীরা বিজয়নগর, তোপখানা রোড ও মুক্তাঙ্গন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। পল্টন মোড়ে এবং আশপাশের গলিতে অসংখ্য মানুষকে বেধড়ক মারধর করা হয়, এমনকি সমাবেশ মঞ্চে আগুন ধরানোর চেষ্টাও করা হয়। এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত ও সংগঠিত হামলা, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বকে নিঃশেষ করা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো।
বক্তারা বলেন, দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিবসহ বিশ্বজুড়ে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজও এ ঘটনার বিচার হয়নি। বক্তারা বলেন, রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবরের বিচার না হওয়া জাতির জন্য এক চরম কলঙ্ক, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সহিংসতার সবচেয়ে জঘন্য অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বক্তারা আরও বলেন, ডাকসু, রাকসু, জাকসু ও চাকসু নির্বাচনে শিবিরের বিজয় প্রমাণ করে দেশে দলের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তারা বলেন, বাংলাদেশে যদি কুরআনের আইন বাস্তবায়ন করা যায়, তবে গুম, খুন ও দুর্নীতি চিরতরে বন্ধ হবে। কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামী নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।
বক্তারা ভোটারদের আহ্বান জানান, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিয়ে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিতে। একই সঙ্গে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত পাঁচ দফা মেনে নিয়ে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে।
অনুষ্ঠান শেষে ২৮ অক্টোবরের শহীদদের হত্যার বিচার দাবি করে এবং শহীদদের রুহের মাগফেরাত ও দেশের কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।







