নওরুজ বা নববর্ষ একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী উৎসব, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালিত হয়। এটি প্রকৃতির পুনর্জন্ম এবং উর্বরতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ইউরোপিয়ান সংবাদ সংস্থা ইউরোনিউজের প্রতিবেদকদের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা
তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তুলে ধরছি কিভাবে নওরুজ উদযাপন করা হয় এবং কীভাবে এটি বিভিন্ন সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে একত্রিত করে।
আজারবাইজান

আজারবাইজানে নওরুজ একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব যা জাতীয় পরিচয়, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে। এটি শীতের বিদায় এবং বসন্তের আগমনের প্রতীক। স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের পর, আজারবাইজানে নওরুজ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
নওরুজের আনুষ্ঠানিক উদযাপন ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়, তবে এটি এক মাস আগে থেকেই উদযাপন শুরু হয়। প্রতি মঙ্গলবার আগুন জ্বালানো হয় এবং লোকেরা ঐতিহ্য অনুসারে আগুনের ওপর দিয়ে লাফিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। বিশেষ করে শেষ মঙ্গলবার “ইলাখির চারশানবা” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং পরিবারের কল্যাণ কামনায় নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
এই উৎসবের প্রস্তুতি অনেক সময় নেয়। রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর সজ্জিত করা হয়, নতুন পোশাক তৈরি করা হয়, রঙিন ডিম, মিষ্টি (শেকারবুরা, পাকলাভা ইত্যাদি) প্রস্তুত করা হয়। প্রতিটি ঘরে ‘সামানি’ (গমের সবুজ চারা) এবং ‘খোনচা’ (মিষ্টি, বাদাম, শুকনো ফলসহ একটি ট্রে) রাখা হয়। তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলায় অংশ নেয়, যেমন দাসমালাতদি (রুমাল নিক্ষেপ), শালসাল্লামা (শাল নাড়ানো), গুরশাগাতদি (বেল্ট নিক্ষেপ), এবং গুরশাগসাল্লামা (বেল্ট নাড়ানো)।
পুরুষেরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসেবে ‘চোখা’ (একটি লম্বা কোট), ‘পাপাখা’ (ফারের টুপি) এবং ঐতিহ্যবাহী বুট পরিধান করে, আর নারীরা সিল্ক বা মখমলের পোশাকে সজ্জিত থাকে, যা সাধারণত সোনালি বা রুপালি সূচিকর্মে অলংকৃত হয়।
কাজাখস্তান

কাজাখস্তানে নওরুজকে “নওর্য়িজ” বলা হয় এবং এটি বসন্তের বিষুব দিন হিসেবে পালিত হয়। এটি প্রকৃতির নবজাগরণ এবং যাযাবর জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক উৎসব। এই সময়টি জমির পুনর্জন্ম এবং দীর্ঘ শীতকাল কাটিয়ে নতুন জীবন শুরু করার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
যাযাবর যুগে, মানুষ তাদের উষ্ণ তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসত এবং গলে যাওয়া বরফের মধ্য দিয়ে বন্ধু ও আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করতে যেত। প্রথম প্রশ্ন থাকত: “আপনি কীভাবে শীত পার করেছেন?” এটি ছিল পারস্পরিক সহমর্মিতার প্রতীক।
নওরুজ উৎসবে ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘নওরুজ কোঝে’ (বিশেষ ধরনের স্যুপ), কুমিস (গোদের দুধ থেকে তৈরি পানীয়) এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করা হয়। নৃত্য, সংগীত, খেলাধুলা এবং ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা নওরুজ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ।
নওরুজ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংহতির প্রতীক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি ভিন্ন ভিন্ন রূপে পালিত হলেও এর মূল উদ্দেশ্য এক—নতুন বছরকে স্বাগত জানানো এবং প্রকৃতির পুনর্জন্মকে উদযাপন করা।