বলিউডে যখন নারীপ্রধান চরিত্রের সাহসী উপস্থাপনা নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে, তখনই ২০২৩ সালে মুক্তি পায় বিশাল ভরদ্বাজের সিনেমা ‘খুফিয়া’। এই সিনেমায় ভারতীয় কিংবদন্তি অভিনেত্রী টাবুর সঙ্গে স্ক্রিনশেয়ার করেন বাংলাদেশের গুণী অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন—যা শুধু তার ক্যারিয়ারে এক মাইলফলকই নয়, বরং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুও হয়ে ওঠে।
সিনেমাটির অন্যতম আলোচিত অংশ ছিল টাবু ও বাঁধনের মধ্যকার চুম্বন দৃশ্য। এই সাহসী দৃশ্যটি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ—দুই দেশের দর্শক মহলেই শুরু হয় তুমুল আলোচনা, কেউ প্রশংসায় ভাসান, কেউ আবার কটাক্ষ করতে ছাড়েন না।
“আমি একজন শিল্পী, ভয় পাই না”দীর্ঘদিন পর, সেই স্মৃতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হন বাঁধন। সোমবার দুপুরে দেওয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি শেয়ার করেন, কীভাবে তিনি এই ছবিতে কাজ করতে রাজি হয়েছিলেন।
পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ তাকে একবার সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলেন—“আজমেরি, এই ছবির প্রস্তাব তো অনেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তুমি কেন রাজি হলে?”
রসিকতার সুরেই বাঁধন জবাব দেন“টাবুকে চুম্বন করার সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চাইবে?”
এই কথায় নির্মাতাও হেসে ফেলেন। তবে পরে বাঁধন যোগ করেন,“আমি আসলে আপনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হারাতে চাইনি। চরিত্রটি আমাকে ভীষণ টেনেছিল। একজন শিল্পী হিসেবে ভয় পেলে চলবে না।”
সিনেমাটিতে বাংলাদেশের আরও কিছু অভিনেত্রীর কাছে প্রস্তাব গেলেও কেউ রাজি হননি বলে জানিয়েছেন পরিচালক। কেউ আপত্তি জানিয়েছিলেন ‘জামায়াত’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে, কেউ আবার নারীর সঙ্গে চুম্বনের দৃশ্য করতে চাননি। কিন্তু বাঁধন তখনও নিজের জায়গায় ছিলেন স্পষ্ট এবং আত্মবিশ্বাসী।
বাঁধনের মতে,“আমি জানি আমি কে। এবং এখানে পৌঁছাতে কী কী করতে হয়েছে। আমি মনে করি, সবার নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার রয়েছে। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। চাই না, জামায়াত বা মৌলবাদীরা আমাদের সমাজে আধিপত্য বিস্তার করুক।”
এই মনোভাব জানার পর বিশাল ভরদ্বাজও বলেন,“আমি ঠিক মানুষকেই বেছে নিয়েছি।”
বাঁধনের এই ফেসবুক পোস্ট আবারও তাকে নিয়ে আলোচনা জোরদার করেছে। কেউ বলেছেন, এটা একজন শিল্পীর মুক্ত মানসিকতার প্রকাশ। আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন তার বক্তব্য ও চরিত্র নির্বাচন নিয়ে।
তবে যেটা নিশ্চিত—বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির সীমা পেরিয়ে আজমেরি হক বাঁধন যেভাবে নিজের অবস্থান তৈরি করছেন, তা সাহস, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসেরই প্রতিচ্ছবি।