কন্নড় সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী বি সরোজা দেবী প্রয়াত। সোমবার (১৪ জুলাই) বেঙ্গালুরুতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এই অভিনেত্রী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে অভিনয়ে পা রাখা সরোজা দেবী ১৯৫৫ সালে কন্নড় ভাষার ছবি ‘মহাকবি কালিদাস’-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে তামিল সিনেমায় এম জি রামচন্দ্রনের বিপরীতে ‘নাডোডি মান্নান’ ছবিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় তাঁর দীর্ঘ রাজত্ব।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয়জীবনে ২০০-র বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন বি সরোজা দেবী। কন্নড়, তামিল, তেলেগু ও হিন্দি—চার ভাষার সিনেমায় নিজেকে সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। শিবাজি গণেশন, জেমিনি গণেশন, রাজকুমার, এনটি রামা রাও—প্রথম সারির সব নায়কের সঙ্গেই পর্দা ভাগাভাগি করেছেন।
ভারতীয় সিনেমায় এক অনন্য রেকর্ড গড়েছেন তিনি—১৯৫৫ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৬১টি ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এত দীর্ঘ সময় ধরে একটানা প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয়ের নজির আর কারও নেই।
এম জি রামচন্দ্রনের সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল রুপালি পর্দার ইতিহাসে অন্যতম। এই জুটির ২৬টি ছবি ছিল সুপারহিট। তাদের উল্লেখযোগ্য ছবি—‘থাই সোল্লাই থাথাধে’, ‘থায়াই কাথা থানায়ান’, ‘নীদি পিন পাসাম’।
শিবাজি গণেশনের সঙ্গে করেছেন ২২টি টানা সফল ছবি। তেলেগু সিনেমায় এনটি রামা রাওয়ের বিপরীতে অভিনয় করা ‘সীতারাম কল্যাণম’, ‘জগদেকা ভীরুনি কথা’ ও ‘দাগুদু মুথালু’ তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল।
হিন্দি সিনেমায়ও রেখেছেন উজ্জ্বল উপস্থিতি—‘পয়গাম’, ‘অপেরা হাউস’, ‘সসুরাল’ ও ‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া’ তাঁকে পরিচিত করে তুলেছিল বলিউড দর্শকদের কাছেও।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৯ সালে পদ্মশ্রী ও ১৯৯২ সালে পদ্মভূষণ সম্মাননায় ভূষিত হন বি সরোজা দেবী। তামিলনাড়ু সরকারের ‘কালাই মামানি’ সম্মান ও বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ছিল তাঁর ঝুলিতে।
শুধু অভিনয় নয়, চলচ্চিত্র সংগঠনের নানা দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। কন্নড় চলচ্চিত্র সংঘের সহসভাপতি ছিলেন এবং ৫৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩৮ সালের ৭ জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে জন্ম বি সরোজা দেবীর। তাঁর বাবা ভাইরাপ্পা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা রুদ্রম্মা গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।
১৯৮৬ সালে স্বামী শ্রী হর্ষর মৃত্যুর পরও চলচ্চিত্র জগৎ থেকে সরে যাননি। বরং তরুণ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো এবং নতুন উদ্যোগে অংশ নেওয়ায় সবসময় ছিলেন সক্রিয়।
ষাটের দশকে তাঁর স্টাইল ছিল ফ্যাশনপ্রেমীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর শাড়ি, গহনা, চুলের স্টাইল অনুসরণ করতেন অসংখ্য ভক্ত। এম জি রামচন্দ্রনের সঙ্গে তাঁর শেষ ছবি ছিল ‘আরসা কাট্টালাই’, মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৭ সালে।
দীর্ঘ ও বর্ণিল ক্যারিয়ারের এই কিংবদন্তির প্রয়াণে ভারতীয় চলচ্চিত্র হারাল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।