তিন বছর পর নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী ফিরলেন একটি জটিল, আবেগঘন ও রহস্যে মোড়া গল্প নিয়ে। বুধবার রাতে মুক্তি পেয়েছে চরকি অরিজিনাল সিরিজ ‘গুলমোহর’, যার মধ্য দিয়ে একটি পরিবারের আয়নায় প্রতিফলিত হয়েছে সমাজের গোপন পাপ, প্রায়শ্চিত্ত ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। আট পর্বের এই পারিবারিক রহস্যনাট্য সিরিজটি মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের কৌতূহলের কেন্দ্রে।‘গুলমোহর’ শুধুমাত্র একটি বাড়ি নয়—এটি একটি পরিবারের অতীত, সম্পর্ক, শেকড়, ভুল এবং ক্ষতচিহ্নের প্রতীক।
গল্পের শুরু হয় এক পিতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে, যেখানে পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়। কিন্তু শোকের ছায়ায়ও ধরা দেয় পুরোনো রাগ, অভিমান ও দীর্ঘদিন চাপা থাকা গোপন সত্য।
শাওকীর নির্মাণ গল্পটিকে শুধুমাত্র জমিজমার ভাগাভাগি বা ভাই–বোনের দ্বন্দ্বে আটকে রাখে না, বরং গল্পটিকে নিয়ে যায় অতীতের পাপ, মানসিক ভার ও আত্মিক যন্ত্রণার স্তরে। নির্মাতার ভাষায়, “গল্পটা রহস্যময় হলেও, এটি এক ধরনের মানসিক যাত্রা।”
ভারতীয় অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় সিরিজে অভিনয় করেছেন বিতাড়িত, সমাজচ্যুত এক চরিত্রে। তার পারফরম্যান্স ভারী ও সংবেদনশীল। বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ অভিনেত্রী সারা যাকের, ইন্তেখাব দিনার, সুষমা সরকার, মীর নওফেল আশরাফী জিসান, সারিকা সাবাহ ও মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের অভিনয় সিরিজটিকে দিয়েছে বহুমাত্রিক আবেগ ও বাস্তবতা।
বিশেষ করে ‘শান্তা’ চরিত্রে সারিকা সাবাহের নীরব কষ্ট ও অস্পষ্ট ভালোবাসার উপস্থাপন দর্শকদের মনে নাড়া দেয়। রেনু চরিত্রে সুষমা সরকারের পারফরম্যান্সে দেখা যায় এক চেনা-অচেনা নারীর টানাপোড়েন। রানার চরিত্রে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান তুলে ধরেছেন উত্তরাধিকার, নির্জনতা ও আত্মসংঘাতের এক অনুপম মিশ্রণ।
সংগীতের সুরে সাজানো গল্প। সিরিজের পর্বগুলোর নাম রাখা হয়েছে সংগীতের সাতটি স্বরের (সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি, সা) অনুপ্রেরণায়। এই নামকরণ শুধু শৈল্পিক নয়, গল্পের ভেতরেও রয়েছে ছন্দের উত্থান-পতন, সুরের হারানো-ফেরা।
সিরিজের গল্প, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন সৈয়দ আহমেদ শাওকী ও মারুফ প্রতীক। তাদের যৌথ চিন্তায় উঠে এসেছে এমন এক পারিবারিক রহস্য, যা দর্শককে বাধ্য করে নিজ নিজ পারিবারিক ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন করতে।
এটি শাওকীর চরকির সঙ্গে প্রথম নির্মাতা হিসেবে কাজ, যদিও এর আগে তিনি এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার ও প্রোডাকশন ডিজাইনার ছিলেন। তাঁর ভাষায়, এটা আমার সবচেয়ে বড় স্কেলের কাজ। এখন মনে হচ্ছে, অপেক্ষাটা সার্থক।
‘গুলমোহর’ শুধু একটি সিরিজ নয়, এটি আমাদের চারপাশের, এমনকি নিজেদের পরিবারের গোপন ইতিহাস খোঁজার এক আয়না। সম্পর্কের ভিতরে থাকা পাপ, নীরব কষ্ট, সমাজচ্যুত জীবনের যন্ত্রণা ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা—সব মিলিয়ে এটি এক গভীর, সুরেলা, দার্শনিক যাত্রা।