স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে কৌতুক অভিনয়ের সমার্থক একটি নাম—দিলদার। আজ ১৩ জুলাই, বাংলা সিনেমার এই কিংবদন্তি অভিনেতার প্রয়াণের ২২ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৩ সালের এই দিনে, মাত্র ৫৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান ‘হাসির সম্রাট’ নামে খ্যাত এই অভিনেতা।
দিলদার ছিলেন এমন একজন শিল্পী, যিনি নায়ক-নায়িকার ছায়া নয়, বরং স্বতন্ত্র উপস্থিতি দিয়ে গল্পে প্রাণ এনে দিতেন। তার সংলাপ, মুখভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গি এবং স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল বাংলা চলচ্চিত্রে অনন্য এক ব্যতিক্রম।
১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হলেও, ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে তিনি হয়ে ওঠেন ঢালিউডের ‘অবিচ্ছেদ্য বিনোদন অংশ’। রাজ্জাক, ফারুক, আলমগীর, জসিম, সালমান শাহ, রিয়াজ কিংবা শাকিল খান—সব প্রজন্মের নায়কদের সঙ্গেই সমান জনপ্রিয় ছিলেন দিলদার।
তার জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে:
🔹 বেদের মেয়ে জোছনা,
🔹 অন্তরে অন্তরে,
🔹 মায়ের অধিকার,
🔹 কেয়ামত থেকে কেয়ামত,
🔹 বিচার হবে,
🔹 আনন্দ অশ্রু,
🔹 এই ঘর এই সংসার সহ শতাধিক হিট ছবি।
তিনি ছিলেন এমন একজন শিল্পী, যার সংলাপ দর্শক আগেই মুখস্ত করে ফেলত। কারণ, সেটি যে দর্শককে হাসাবে, তা নিশ্চিত।২০০২ সালে ‘তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য দিলদার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। যদিও সে সময় শারীরিকভাবে তিনি বেশ অসুস্থ ছিলেন।
২০০৩ সালের ১৩ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দিলদার। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা আজও পূরণ হয়নি। বাংলা সিনেমায় কৌতুক চরিত্রে বহু শিল্পী এলেও দিলদারের মতো ম্যাজিক ও গ্রহণযোগ্যতা আর কেউ সৃষ্টি করতে পারেননি।
নায়ক আলমগীর একবার বলেছিলেন,
“ছবির গল্প যতই সিরিয়াস হোক, দিলদার ভাই থাকলে দর্শক হাসবে—এটা ছিল পরিচালকের গ্যারান্টি।”
অভিনেত্রী শাবানা বলেছিলেন,
“দিলদার ভাই ছাড়া একটা সময় চলচ্চিত্র চিন্তাই করা যেত না।২২ বছর পরেও বাংলাদেশের দর্শক হৃদয়ে অমলিন দিলদার। কৌতুক শুধু যে হাসায়, তা নয়—হৃদয়ের ক্লান্তি ভোলায়, জীবনের জটিলতায় প্রলেপ দেয়—এ সত্যকে তিনি জীবন্ত করে তুলেছেন রূপালী পর্দায়।
আজকের দিনে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই মানুষটিকে, যিনি হাজারো দর্শককে শুধু আনন্দই দেননি, সিনেমাকে করেছেন প্রাণবন্ত।