মনির হোসেন, বেনাপোল:
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এক এইচআইভি (এইডস) পজেটিভ রোগীর সফল সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসা খাতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. জেসমিন সুলতানা। রবিবার (১ জুন) দুপুর ১২টার দিকে সম্পন্ন হওয়া এই অস্ত্রোপচারে ওই নারী একটি সুস্থ ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। বর্তমানে মা ও নবজাতক উভয়েই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সতর্কতার অংশ হিসেবে সিজার শেষে গাইনি অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট একই হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এইডস আক্রান্ত নারীকে সিজার করেছিলেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নিলুফার ইসলাম এমিলি।
৩ মাস আগে ধরা পড়ে এইচআইভি পজিটিভ
জানা গেছে, তিন মাস আগে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ওই নারী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। তখন তার গর্ভকাল ছিল ৬ মাস। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার শরীরে এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়। বিষয়টি গাইনি বিভাগ থেকে কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে প্রয়োজনীয় অনুমতি ও প্রস্তুতির মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হয়।
অবশেষে রোববার ডা. জেসমিন সুলতানার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি বিশেষ মেডিকেল টিম অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করেন।
চিকিৎসকদের মানবিক সাহস ও সফলতা
অস্ত্রোপচার টিমের এক চিকিৎসক জানান, এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম এইচআইভি পজেটিভ রোগীর অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মানবিক দায়িত্ব পালনে অংশ নিতে পেরে তিনি মানসিকভাবে সন্তুষ্ট বলে জানান।
প্রশংসা জানালেন স্বাস্থ্য প্রশাসন
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল বলেন, “এইচআইভি রোগীর সিজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। এরপরও চিকিৎসকরা সাহসিকতার সঙ্গে এই কাজটি করেছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।” তিনি জানান, দক্ষিণবঙ্গে এটাই দ্বিতীয়বার এমন সফল অস্ত্রোপচার।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, “এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সফল অস্ত্রোপচার করে আমাদের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”
সংক্রমণ রোধে বিশেষ ব্যবস্থা
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, বিশেষ সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সিজার সম্পন্ন হয়। মা ও নবজাতককে বর্তমানে আলাদা কেবিনে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, তাই জন্মের আগে মাকে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে নবজাতক এইচআইভি পজিটিভ কি না, তা নির্ধারণে কিছু দিন সময় লাগবে।