নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা:
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বড়দাউদপুর গ্রামের স মিল মোড়ে একটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩৬ বস্তা (প্রায় ২৮৮০ কেজি) ভিজিডি চাল জব্দ করেছে। এসব চাল দরিদ্র ও দুস্থ নারীদের জন্য বরাদ্দ ছিল। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি এ সহায়তা অসাধু উপায়ে আত্মসাৎ করে ব্যক্তিগত মজুদের উদ্দেশ্যে গোডাউনে রাখা হয়েছিল।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম। অভিযানে সহায়তা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জসিম উদ্দিন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস এবং রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম।
অভিযানের আগে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সাংবাদিক আকুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম ও মোস্তফা জামান সরেজমিনে তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যান। তারা সেখানে পৌঁছে গোডাউনের মালিক ফতু মিয়ার ছেলে লাজু মিয়াকে খুঁজতে থাকেন। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর লাজু মিয়া উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “দুদকের মহাপরিচালক আমার চাচা। আমি চাউল কিনছি, সমস্যা কী?”

এই বক্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ও উপস্থিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশ্ন, যদি চাল বৈধভাবে কেনা হয়ে থাকে, তবে সরকারি ভিজিডি বস্তাগুলো কেন ব্যক্তি মালিকানাধীন গোডাউনে? চালগুলোতে সরকারি সিল ও ভিজিডির চিহ্ন স্পষ্টভাবে ছিল, যা থেকে সন্দেহ জোরালো হয় যে এগুলো দুর্নীতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম বলেন, “ভিজিডি চাল গরিব ও অসহায় নারীদের সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হয়। এই চাল অবৈধভাবে কেউ মজুত করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযানে জব্দকৃত চালগুলো সরকারি মালামাল হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের দুর্নীতি দরিদ্রদের অধিকার হরণ করে। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এখন পর্যন্ত চালগুলো কীভাবে লাজু মিয়ার গোডাউনে গেল, কারা এর সঙ্গে জড়িত এবং এর পেছনে কোনো বড় সিন্ডিকেট রয়েছে কিনা—তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
উল্লেখ্য, ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতি মাসে নির্দিষ্টসংখ্যক হতদরিদ্র নারীকে বিনামূল্যে চাল প্রদান করা হয়, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।
এই ঘটনা ভিজিডি কর্মসূচির বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এরকম অনিয়ম রোধে ভবিষ্যতে আরও কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।