মো. আব্দুল কুদ্দুস,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ১৬ জুন সোমবার ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ১০ টায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ এ এসে পৌঁছান। এসময় তাকে স্বাগত জানান রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এস. এম. হাসান তালুকদার, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সুমন কান্তি বড়ুয়া, ট্রেজারার প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। এরপর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ এর অডিটোরিয়ামে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস সম্পর্কিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর তিনি বাঘাবাড়ী ঘাট থেকে বড়াল নদী পাড়ি দিয়ে পৌঁছান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে।
সেখানে পৌঁছালে উপদেষ্টাকে স্বাগত জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ জমি এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ঘুরে দেখেন পরিবেশ উপদেষ্টা। এরপর মাননীয় উপদেষ্টা সেখানে একটি বৃক্ষরোপণ করেন।বৃক্ষরোপণ শেষে এক আলোচনা সভায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা মহোদয় বলেন, এখানে এসে আমার দুটো জিনিস দেখা হলো, একটা হলো যে স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সেটা এবং অন্যটি এই স্থানটার পাশে যে প্রাকৃতিক আবেদন আছে সেটা। তিনি আরও বলেন, আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিটি একটি যৌক্তিক দাবি, আপনাদের নিজস্ব একটা ক্যাম্পাসের দাবি সেটাও যৌক্তিক দাবি। এই যে আমরা সংস্কারের কথা বলি এটাই হচ্ছে বিষয় যে, আমাদের কাজগুলো, জনসেবাগুলো যেন আমরা সঠিক সময়ে করতে পারি। উপদেষ্টা মহোদয় বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শুনলেই তো কাব্যিক কাব্যিক অনুভূতি হয়, আজকের দিন টাও সেই অনুভূতিটাকে সমর্থন করল। আপনাদের এই প্রকল্পটা একনেকে উঠেছিল। আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নিজস্ব ক্যাম্পাস লাগবে, এই ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। আমাদের শুধু এখানে এসে দেখা যে জায়গাটা কেমন এবং জায়গাটা কতটুকু উপযুক্ত।
সিরাজগঞ্জ শহরকে মানুষ চেনে যমুনাপারের শহর হিসেবে; সিরাজগঞ্জ-পাবনাকে মানুষ চেনে তাঁতের কাপড় উৎপাদনের স্থান হিসেবে, ভালো মিষ্টি তৈরির স্থান হিসেবে। একই সাথে সিরাজগঞ্জকে যেন মানুষ চেনে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। মাননীয় উপদেষ্টা সবার প্রতি শুভকামনা জ্ঞাপন করেন।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এস. এম. হাসান তালুকদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। সর্বপ্রথম ২০১৮ সালে ৯২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত হলে সেটি অনুমোদন পায়নি। অতঃপর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাজেট মোট ৭ বার কমিয়ে সর্বশেষ বর্তমানে ৫১৯ কোটি টাকায় আনা হয়েছে যা মূল বাজেটের ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৯৪ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত ১০০ একর জমি থাকা সত্ত্বেও গত আট বছরে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ইটের পয়সাও দেওয়া হয়নি। জাতীয় সংগীতের রচয়িতা এবং একজন নোবেল লরিয়েট যাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি তৈরি হয়েছে। এই গুরুত্ব বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টি হওয়া উচিত ছিল আন্তর্জাতিক মানের। অথচ গত আট বছর যাবৎ এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি ভাড়া ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়টি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। নিজস্ব একটি ভবনও নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল সুবিধাবঞ্চিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। গত সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রস্তাবিত প্রকল্প সংশোধনের গোলকধাঁধায় পড়ে চরমভাবে উপেক্ষিত ও অবহেলিত ছিলো। কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ছাত্র জনতার অভ্যুথানের পেক্ষাপটে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা আশার আলো দেখছি। আমাদের ছোটো প্রকল্পটি ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রিএকনেক অর্থাৎ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আর্থসামাজিক বিভাগে অনুমোদনের পর আসন্ন একনেক সভায় অনুমোদনের নিমিত্ত চূড়ান্ত বিবেচনার অপেক্ষায়। মাননীয় উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে মাননীয় উপাচার্য বলেন, আপনার নিকট আমাদের সবিনয় অনুরোধ সঠিক বিবেচনায় আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদনের সুপারিশ করে চলমান শিক্ষার পথকে প্রসারিত করুন। চার বছরব্যাপী আমাদের এই ছোটো উন্নয়ন প্রকল্পটি যখন পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স হবে ১২ বছর অর্থাৎ কার্যত ১২ বছরে ৫১৯ কোটি টাকার বরাদ্দ। এটি কি যথেষ্ট? নিশ্চয়ই নয়। আমাদের বক্তব্য তবুও এবং অনতিবিলম্বে এর কার্যক্রম শুরু হোক। সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাদপুর সার্কেল ও শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এছাড়াও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সুমন কান্তি বড়ুয়া, ট্রেজারার প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।