শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: প্রতি বছরের মত এবারও নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের শতাধিক কসাই কুরবানী উপলক্ষে ৩ দিনের জন্য রাজধানী ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ট্রেন ও বাসে করে অর্ধশতাধিক কসাই ঢাকা পৌঁছেছেন। কেউ কেউ বিমানের টিকিট কেটে রেখেছেন ঈদের দিন দ্রুত ঢাকায় পাড়ি জমাতে। সৈয়দপুরের এসব কসাই কুরবানির তিন দিনে অন্তত ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার বেশি আয় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শহরের গোলহাট এলাকার কসাই সুলতান জানান, কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে মাস খানেক আগেই ঢাকার অনেকেই সৈয়দপুরের কসাইদের বুকিং দিয়ে রেখেছেন। এ কারণে ঈদের ২-৩ দিন আগেই ঢাকায় সব কসাইকে পৌঁছাতে হবে। হাজারে ২শ’ টাকা হিসেবে কন্ট্রাক্ট করেই কসাইদের ডাকা হয়েছে। সে হিসেবে এক লাখ টাকার একটি গরুতে কসাইরা ২০ হাজার টাকা মজুরী পাবে।
সৈয়দপুর পৌর গোস্তহাটির কসাই রাব্বি, নওশাদ, মিন্টুসহ আরও অনেকে ইতিমধ্যে বিমানের টিকিট বুকিং করে রেখেছেন ঈদের আগের দিন বিমানে করে তারা ঢাকা যাবেন। তারা জানান, আগামী কয়েকদিনে ট্রেন ও বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন আমাদের অনেক কসাই। আমরা যেহেতু বিমানে যাচ্ছি তাই ঈদের আগের দিন যাবো। ঢাকায় বেশ কয়েক যায়গায় বুকিং হয়ে গেছে আমাদের।
কলিম মোড় এলাকার কসাই মোস্তাকিম, ইলিয়াস, জাম্বুসহ অন্যান্যরা জানান, এবারও ঢাকায় গিয়ে কুরবানির পশুর গোশত কাটার কাজ করবেন সৈয়দপুরের শতাধিক কসাই। চারজন করে একটি গ্রুপে পশু কাটার কাজ করবেন তারা। তিন দিনে একেকটি গ্রুপে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ টি গরু কাটতে পারবেন। এতে করে একেকটি গ্রুপ ৪ লাখ টাকা আয় করতে পারবে।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের স্থানীয় কাউন্টার ম্যানেজার লাকী বলেন, ১৫-২০ জন কসাই ঢাকা যাওয়ার জন্য আমাদের পরিবহনের টিকিট চেয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ টিকিট নিয়ে গেছেন। অন্যান্য পরিবহনেও একই চিত্র। সৈয়দপুর থেকে অনেক কসাই ঈদের আগের দিন বিমানযোগে ঢাকায় যাবেন বলে জানান বিমানের টিকিট বিক্রেতারা।
ঢাকার মিরপুরে থাকেন একটা বেসরকারি বহুতল ভবন নির্মাণ কোম্পানির কর্মকর্তা রেজাউল করিম রুপম। চাকরির সুবাদে তিনি সৈয়দপুরে ছিলেন দীর্ঘদিন। এ কারণে এ শহরের অনেকেই তার পরিচিত। ঈদে কুরবানির পশুর গোশত প্রক্রিয়াজাত করতে মোবাইলে সৈয়দপুরের একজন কসাইয়ের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তার। ঈদের দিন সকালে মিরপুরের বাসায় গিয়ে গরুর গোশত কাটতে হবে।
একই কথা জানান, রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা সাফাত বিন হাবিব। তিনিও শ্বশুর বাড়ি সৈয়দপুর শহরের কসাই ঠিক করেছেন কুরবানির পশুর গোশত কাটার জন্য। তার মতে সৈয়দপুরের কসাইদের হাত বেশ ভালো। তারা অল্প সময়েই খুব সুন্দরভাবে পশুর খালগিরিসহ সঠিক মাপে গোশত কাটতে পটু। এর আগেও তাদের দিয়ে একাজ করিয়েছেন।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাদিম (ছোটু) জানান, আসলে রাজধানীতে পশুর গোশত প্রস্তুত করতে আমাদের কসাইরা সৈয়দপুরের চেয়ে দ্বিগুন মজুরী পান সে কারনে প্রতি বছর শতাধিক কসাই ঢাকায় পাড়ি জমান। সৈয়দপুরে যেখানে প্রতি হাজারে ৮০-১০০ টাকা মেলে সেখানে রাজধানীর ঢাকায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পাবে প্রতি হাজারে। ইতিমধ্যে যাদের বুকিং হয়েছে তাদের কেউ কেউ বিমানের, ট্রেনের আবার বাসের টিকিট কেটেছেন। আবার অনেকে ইতোমধ্যেই ঢাকা গেছেন নতুন বুকিং করতে। এভাবে সৈয়দপুরের শতাধিক কসাই কুরবানীর গোশত কাটতে পাড়ি জমাচ্ছেন ঢাকায়।