মোস্তাফিজুর রহমান, গাইবান্ধা (সাঘাটা, ফুলছড়ি): ঈদ মানেই এক সময় ছিল কামার পল্লির ব্যস্ততা। ধারালো হাঁসুয়া, কাঁচি, ছুরি বা দা তৈরির ধুম পড়ে যেত ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে। কিন্তু সময় বদলেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই চিরচেনা দৃশ্য আজ অনেকটাই ফিকে। ফুলছড়ি উপজেলার কামারপল্লিতে ঈদ এলেও নেই আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য।
সরজমিন উল্যা, গজারিয়ার স্থানীয় কামার কমল কর্মকার, বাবলু কর্মকার ও ধনজয় কর্মকার জানান, আগে ঈদের দুই-তিন মাস আগে থেকেই অর্ডারের চাপ থাকত। গ্রামেগঞ্জে মানুষ কোরবানির জন্য দা, ছুরি ও চাপাতি বানাতে কামারের দোকানেই ভিড় করত। কিন্তু এখন বেশিরভাগ মানুষ বাজারজাত চাইনিজ বা কারখানায় তৈরি পণ্য কিনে নেয়, যা দেখতে চকচকে হলেও টেকসই নয় বলে দাবি করেন তারা।
কমল কর্মকার বলেন, “আগে ঈদের সময় একদিনে ২০-৩০টা ছুরি-বঁটি বিক্রি হতো, এখন পুরো ঈদের মৌসুমেও ততটা হয় না।” এখন কয়লার আগের মতো পাওয়া যায় না।
বাবলু কর্মকার বলেন, “এক সময় কামারগিলার আয় দিয়েই সংসার চলত। এখন দিন আনতে দিন খেতে হয়। নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আগ্রহ পাচ্ছে না।”
ধনজয় কর্মকার বলেন, “লোহার দাম বেড়েছে, অথচ পণ্যের দাম বাড়াতে পারি না। ফলে লাভ তো দূরের কথা, কোনোমতে খরচই উঠে আসে।”
প্রযুক্তির উন্নয়ন, বাজারে সহজলভ্য দামের পণ্যের ছড়াছড়ি, আর তরুণ প্রজন্মের আগ্রহের অভাব—এই তিন কারণেই ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে কামার শিল্প। অথচ এক সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়ির একটি না একটি সরঞ্জাম তৈরি হতো এই কামারদের হাতে।
ঈদ আসছে ঠিকই, কিন্তু ফুলছড়ির কামার পল্লির মুখে নেই হাসি। কোরবানির মৌসুমে যেখানে এক সময় ঘাম ঝরিয়ে রাত-দিন কাজ করতেন কামাররা, এখন সেখানে সময় কাটে অপেক্ষায়—কোনো একজন গ্রাহক এসে হয়তো একটা অর্ডার দেবে।