ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক চিঠিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি ফরাসি নেতার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপকে ইহুদি-বিদ্বেষে ইন্ধন জোগানোর জন্য দায়ী করেছেন।
একজন ফরাসি মন্ত্রী এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইকে ‘নিজেদের মতো করে কাজে লাগানো উচিত নয়’।গত মাসের শেষের দিকে ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের সভায় ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। ফ্রান্সের এই ঘোষণায় বজ্রাঘাত পড়ে নেতানিয়াহুর মাথায়। তীব্র নিন্দা জানায় ইসরাইল।
এই পদক্ষেপ ঘোষণার মাধ্যমে প্রায় দুই বছর আগে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া ক্রমবর্ধমান দেশগুলির তালিকায় যোগ দিতে প্রস্তুত ফ্রান্স।ম্যাক্রোঁকে পাঠানো চিঠিতে নেতানিয়াহু বলেন, তার ঘোষণার পর ফ্রান্সে ইহুদি-বিদ্বেষ ‘উত্তেজিত’ হয়ে উঠেছে।
‘‘একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য আপনার আহ্বান এই ইহুদি-বিদ্বেষী আগুনে ইন্ধন যোগাচ্ছে। এটি কূটনীতি নয়, এটি একটি তুষ্টি। এটি হামাসকে পুরস্কৃত করছে, জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের অস্বীকৃতিকে আরও কঠোর করছে, ফরাসি ইহুদিদের হুমকি প্রদানকারীদের সাহস জোগাচ্ছে এবং আপনার রাস্তায় এখন তাড়া করছে এমন ইহুদি-বিদ্বেষীদের উৎসাহিত করছে,’’ চিঠিতে দাবি করেন নেতানিয়াহু। গাজায় নিজের অপরাধের কথা স্মরণ না করেই এতকিছু লিখেছেন তিনি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সে ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ম্যাক্রোঁকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাকে ‘দুর্বলতাকে কর্মের মাধ্যমে, তুষ্টিকে সংকল্পের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করতে হবে এবং একটি স্পষ্ট তারিখ তথা ইহুদি নববর্ষ ২৩ সেপ্টেম্বর মধ্যে তা করতে হবে।ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী বেঞ্জামিন হাদ্দাদ বলেছেন, তার দেশের ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে শেখার কিছু নেই।
হাদ্দাদ আরও বলেন, যা আমাদের ইউরোপীয় সমাজকে বিষাক্ত করছে, সেই বিষয়টিকে ‘শোষণ করা উচিত নয়’।এএফপির এক পরিসংখ্যান মতে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ফ্রান্স অন্তত ১৪৫টি সদস্যের মধ্যে রয়েছে যারা এখন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে বা স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
অস্ট্রেলিয়া এই মাসের শুরুতে এই তালিকায় যোগ দিয়েছে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের আসন্ন সভায় দেশটি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার নেতানিয়াহু তার অস্ট্রেলীয় প্রতিপক্ষ অ্যান্থনি আলবানিজের তীব্র সমালোচনা করেন এবং তাকে ‘ইসরাইলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী এবং অস্ট্রেলিয়ার ইহুদিদের পরিত্যাগকারী একজন দুর্বল রাজনীতিবিদ’ হিসেবে অভিহিত করেন। নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে এই ক্ষোভ ঝাড়েন।
সোমবার অস্ট্রেলিয়ান সরকার অতি-ডানপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ সিমচা রথম্যানের ভিসা বাতিল করার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ যখন তুঙ্গে তখন এই ব্যক্তিগত আক্রমণের ঘটনাটি ঘটে।নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন জোটে থাকা অতি-জাতীয়তাবাদী দল রথম্যানের অস্ট্রেলিয়ান ইহুদি সমিতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল।
ভিসা বাতিলের কয়েক ঘন্টা পরে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেন, তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের ভিসা বাতিল করেছেন।
এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেছেন, তাদের ভিসা বাতিল করা ইসরায়েলের ‘অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়া’ এবং নেতানিয়াহুর সরকার ‘ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন করছে এবং শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে দুর্বল করছে’।