হযরত মাওলানা মুহম্মদ আবুল বাশারঃ
সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনি একবার ছফর করছিলেন। ছফর করতে করতে এক এলাকায় গেলেন। বিরাট একটা ময়দান! সেখানে যেয়ে বললেন যে, বারে এলাহী! এখানে এই যে অনেক বড় একটা ময়দান, এখানে আপনার কোনো নিদর্শন মুবারক আছে কি দেখার মতো? তখন যিনি খ¦ালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন যে, হঁ্যা; আছে।
কোথায়? মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি সামনে সোজা হাঁটতে থাকেন। উনি সোজা হাঁটতে থাকলেন। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর আসলেন। আসার পরে দেখলেন, সামনে বিরাট একটা গম্বুজ! সেখানে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তখন উনি বললেন, বারে এলাহী! এখন তো রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। বিরাট একটা গম্বুজ এখানে। তখন যিনি খ¦ালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন যে, আপনি এক কাজ করুন— আপনার যে আছা (লাঠি) মুবারকখানা আছে, এটা সোজা করে আস্তে গম্বুজের উপর রাখুন। তাহলেই রাস্তা হয়ে যাবে। উনি যখন আছা মুবারকখানা রাখলেন, সাথে সাথে গম্বুজটা দুই ভাগ হয়ে গেলো! দেখা গেলো এর মধ্যে একজন বুযূর্গ লোক!
মুখতালিফ বর্ণনা— কেউ কেউ বলেছেন, বুযূর্গ লোকটি তাসবীহ হাতে বসা। কেউ কেউ বলেছেন, দাঁড়ানো। উনার সামনে আনার ফল। এটা দেখে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তাজ্জুব হয়ে গেলেন! তিনি বললেন, এটা কি মহান আল্লাহ পাক? জিজ্ঞাসা করলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! এর কী হাক্বীক্বত? যিনি খ¦ালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক কলেন, হঁ্যা; এটার হাক্বীক্বীত রয়েছে। আমাকে বলতে হবে না। আপনি ঐ বুযূর্গ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করুন।
ঐ বুযূর্গ ব্যক্তিই বলবেন। তখন উনি ঐ বুযূর্গ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কে? কতদিন ধরে আছেন এখানে? ঐ বুযূর্গ ব্যক্তি বললো— আমি এখানে ৪শ বছর ধরে যিকির—ফিকির, ইবাদত—বন্দেগীতে মশগূল আছি। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তখন হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে আপনি যে এখানে থাকেন, খাওয়া—দাওয়া করেন কী? উনি বললেন, এই যে দেখেন জান্নাতী আনার ফল। আমাকে প্রতিদিন জান্নাত থেকে আনার ফল দেয়া হয়। আমি সেটা খাই। ঠিক আছে; তাহলে আপনার ওযূ—ইস্তিনজা, অন্যান্য বিষয় কিভাবে হয়? উনি বললেন, এটা কুদরতীভাবে ফায়ছালা হয়। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে আপনি দিন—রাত্রি বুঝে কিভাবে? উনি বললেন, দিন হলে ভিতরে একটু আলো হয় আর রাত্রি হলে অন্ধকার হয়। তখন জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে আপনি এখানে আসলেন কিভাবে? তখন সেই ব্যক্তি বললেন, আসলে আমি আমার পিতা—মাতা উনাদের খুব বাধ্যগত সন্তান ছিলাম। আমি আমার বাবা—মা উনাদের অনেক খেদমত করেছি। আমার বাবা—মা আমার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। উনারা ইন্তিকাল করার সময় আমার জন্য অনেক দো‘আ করেছেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাকে কুদরতীভাবে হেফাযত করেন এবং কুদরতীভাবে যেন মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত—বন্দেগী করার তাওফীক্ব দান করেন।
যার কারণে উনারা যখন ইন্তিকাল করেন, তারপর আমি কুদরতীভাবে এখানে এসেছি। আমি কুদরতীভাবে এখানে ৪শ বছর যাবত ইবাদত—বন্দেগীতে মশগূল রয়েছি। এটা শুনে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক! তাহলে আপনার এই বান্দা তো অনেক বড় নেককার! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হঁ্যা; সে অনেক বড় নেককার। ঠিকই আছে। তখন যিনি খ¦ালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি এটা দেখে তাজ্জুব হয়ে গেলেন? এই লোকের ৪শ বছরের ইবাদত—বন্দেগী জেনে আপনি কি আশ্চর্য হচ্ছেন? এর চেয়ে আরো আশ্চর্যময় বিষয় রয়েছেন। তখন হযরত রূহুল্লাহ আলাইহি সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক! তাহলে আরো আশ্চর্যময় বিষয় কি রয়েছেন? তখন যিনি খ¦ালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সেটা হলো— আমার যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়। সেই বিষয়টা কি? সেই বিষয়টা হচ্ছে— আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উনার উম্মতদেরকে আমি একটা রাত্র মুবারক দিয়েছি। সেই রাত্রিতে যদি কোন উম্মত খালিছ নিয়াতে মাত্র দুই রাকাত নামায পড়তে পারে, তাহলে এই বুযূর্গ ব্যক্তি ৪শ বছর ইবাদত—বন্দেগী করে যেই নেয়ামত হাছিল করেছেন, মুহব্বত—মা’রিফত, নিসবত—কুরবত হাছিল করেছেন, সেই উম্মত এই বুযূর্গের থেকে বেশি নেয়ামত হাছিল করবেন, মুহব্বত—মা’রিফত, নিসবত—কুরবত হাছিল করেছেন।
সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন যে, মহান আল্লাহ পাক! সেটা কোন রাত্র? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সেটা হচ্ছে— লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান (পবিত্র ১৫ই শা’বান শরীফ), শবে বরাতের রাত্র। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনি সিজাদয় পড়ে গেলেন যে, মহান আল্লাহ পাক! তাহলে আমাকে নবী—রসূল না করে সেই আখেরী নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত করে দিন আমাকে। উনি সিজাদয় গেলেন। যেয়ে দো‘আ করতে থাকলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি জানালেন, ঠিক আছে; আপনাকে ক্ববূল করা হলো। উনি আখেরী যামানায় উম্মত হিসেবে আসবেন।
তাহলে এই উম্মতকে কতো নেয়ামত দেয়া হয়েছে? তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কতটুকু রহমান, রহীম, গাফ্ফার, সাত্তার? ঠিক একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি রহমাতুল্লালি আলামীন,
রউফুর রহীম কতটুকু? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উম্মতদেরকে একটা রাত্র দেয়া হয়েছে। সেই রাত্রে দুই রাকাত নামায পড়লে এতো ফযীলত! তাহলে এই উম্মতের কত ফযীলত? তাহলে সেই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত কত? উনি শুধু মহান আল্লাহ পাক নন; এছাড়া সব। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
(আল ইহসান)